ঘোষণা পাকিস্তানের |
শৈশবের স্মৃতি উস্কে দিলীপ কুমারের জন্মভিটে সংরক্ষণ |
সংবাদসংস্থা • ইসলামাবাদ |
সেই কবে পাকিস্তান ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছেন ভারতে। কিন্তু আজও জন্মভিটেকে ভুলতে পারেননি দিলীপ কুমার। তাঁকে ভোলেনি পাকিস্তানও। সেই ১৯৯৭-এ তাঁকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দেওয়ার পরে এ বার পেশোয়ারে বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমারের জন্মভিটেকে জাতীয় সংরক্ষণস্থল হিসেবে ঘোষণা করতে উদ্যোগী হয়েছেন পাক কর্তৃপক্ষ।
পেশোয়ারের বিখ্যাত ‘কিস্সা চেহানি বাজার’ বা গল্প বলার বাজার। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী আর অভিযাত্রী এখানে এসে জড়ো হন গল্প বলতে। এই বাজারের কাছেই দমা গলির এক দোতলা বাড়িতে ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন মহম্মদ ইউসুফ খান। যিনি পরবর্তী কালে অভিনয় জগতে পরিচিত হন দিলীপ কুমার নামে। বাবা লালা গুলাম সরওয়ার ফল-ব্যবসায়ী ছিলেন। দিলীপ কুমারের ছোটবেলার অনেকটাই কেটেছে এই অঞ্চলে। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি সম্প্রতি একটি ব্লগে লিখেছেন, “অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার জন্মভিটের সঙ্গে। আমাদের বাড়িটা সব সময় আত্মীয়স্বজনের কলরবে ভরে থাকত। আমি আমার গল্প বলার শিক্ষা ওই কিস্সা কাহানি বাজার থেকেই পেয়েছি যা পরবর্তী কালে অভিনয় জীবনে আমার অনেক কাজে লেগেছে।” |
|
পাকিস্তানে দিলীপকুমারের জন্মভিটে। |
গত ডিসেম্বরেই খাইবার-পাখতুন প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী মিয়াঁ ইফতিকার হুসেন দিলীপ কুমার ও রাজ কপূরের জন্মভিটে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, দিলীপ কুমারের বাড়ি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ঘোষণা করায় অনেকেই বাড়িটির মালিকানা দাবি করে। শেষে ইক্রামুল্লা খান নামে এক ব্যক্তিকেই বাড়ির মালিক বলে স্বীকার করে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ইক্রামুল্লা জানান, দিলীপ কুমারের বাবা লালা গুলাম ১৯৪৩ সালে তাঁদের আত্মীয় ইউসুফ কুরেশিকে বাড়িটি বিক্রি করে দেন। পরে ২০০৫ সালে বাড়িটি কেনেন ইক্রামুল্লা। তিনি আরও জানান যে তিনি দিলীপ কুমার অভিনীত কোনও সিনেমা দেখেননি। তবে তিনি যে এক জন বিখ্যাত অভিনেতা সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ইক্রামুল্লা। বাড়িটি প্রশাসন অধিগ্রহণ করছে বলে যথেষ্ট খুশি তিনি। তবে পাঁচ কোটির বদলে প্রশাসন তিন কোটি টাকা দেবে বলায় একটু মনমড়া হয়েও রয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁদের বয়স আশি বা নব্বইয়ের কোঠায় তাঁদের কেউ কেউ এখনও মনে করতে পারেন যে ছোটবেলায় দিলীপ কুমার কী ভাবে স্কুলে নাটকে অভিনয় করতেন। তবে স্থানীয় তরুণদের মধ্যেও কম জনপ্রিয় নন তিনি। দমা গলির সামনে একটি তেলেভাজা বিক্রির দোকানে দিলীপ কুমারের বিভিন্ন ছবি টাঙানো রয়েছে। তবে তাঁর জন্মভিটের অবস্থা বেশ খারাপ। দোতলা বাড়ির অনেক অংশই ভেঙে গিয়েছে। আশির দশকে দু’বার এখানে এসেছিলেন তিনি। পাক কর্তৃপক্ষ তাঁর জন্মভিটেকে জাতীয় সংরক্ষণস্থল হিসেবে ঘোষণা করায় তিনি অভিভূত বলে একটি ব্লগে লিখেছেন।
খাইবার-পাখতুন প্রদেশের তথ্য অফিসার সুয়েবুদ্দিন জানান, অধিগ্রহণের কাজ অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই এটির সংস্কার শুরু হবে। এটি অধিগ্রহণ শেষ হলে রাজ কপূরের পাঁচ তলা জন্মভিটেও অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে বলে
জানান তিনি।
আর এই জন্মভিটে অধিগ্রহণের মাধ্যমেই হয়তো দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অন্য মাত্রা নেবে। অন্তত এই আশায় রয়েছে দু’দেশের সাধারণ মানুষ। |
|