বাড়ল নয়াদিল্লির উদ্বেগ
আমেরিকার পাক-নির্ভরতা বাড়াবে কাবুলের হামলা
পারভেজ মুশারফের সাক্ষাৎকার হইচই ফেলে দিয়েছিল গোটা উপমহাদেশে। সেটা ২০০৪ সালের ৪ জুন। প্রেসিডেন্ট তথা সেনাপ্রধান জানালেন, পাকিস্তানি সেনা ও বিমান বাহিনীর কিছু অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ এই অফিসারদের সঙ্গে মুসলিম জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তাঁরা ২০০৩ সালে মুশারফকেই হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই গ্রেফতারেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই মুশারফকেও পাকিস্তানের গদি থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
কারণ তিনি আমেরিকার ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে উঠেছিলেন। এখন আবার পাক-সেনাপ্রধান আশফাক পারভেজ কিয়ানিও ভয় পান, আমেরিকার চাপে মাথা নোয়ালে মুশারফের মতো পরিণতি হতে পারে তাঁরও।
সেই আমেরিকার চাপ কাটাতেই কি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের জেল ভেঙে ৪০০ তালিবান বন্দিকে বের করে নিয়ে যাওয়া এবং আফগানিস্তানের কাবুলে পার্লামেন্ট ও দূতাবাস এলাকায় তালিবানি হামলা?
নয়াদিল্লির বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি জেলে হামলা চালিয়েছে তেহরিক-ই-তালিবান গোষ্ঠী, যারা পাক-বিরোধী। আবার কাবুলে হামলার পিছনে রয়েছে পাকিস্তান-পন্থী হক্কানি-গোষ্ঠী।
নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকদের মতে, দু’টি হামলার উদ্দেশ্য পৃথক হতে পারে, কিন্তু এমন একটা সময়ে তা করা হল, যখন হামিদ কারজাই ও আমেরিকা, দু’পক্ষই তালিবানের সঙ্গে দর কষাকষি করছে। এই সময়ে হামলা চালিয়ে তালিবান শক্তি জাহির করল এবং দর কষাকষির ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে নিল। আসন্ন নির্বাচন ও মার্কিন অর্থনীতির মন্দার কথা ভেবে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পথে হাঁটতে হচ্ছে বারাক ওবামাকে। এই পরিস্থিতিতে আল কায়দা ও তালিবানের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছিল আমেরিকা। কিন্তু পাকিস্তানও আমেরিকার কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করছিল না। আজকের ঘটনার পরে পাকিস্তানের উপর আমেরিকার নির্ভরশীলতাই আরও বাড়বে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। সন্দেহ নেই, এ ঘটনা ভারতের কাছে অভিপ্রেত নয়।
তালিবান বলছে, আজ আর একটা অধ্যায়ের শুরু হল। এর পর আরও অনেক কিছু হবে। ফলে ভারতের উদ্বেগও বাড়ছে। নয়াদিল্লি মনে করছে, ফের আফগানিস্তানকে তালিবানিকরণের দিকে নিয়ে যেতে মরিয়া আল কায়দা ও সহযোগী শক্তিগুলি। এর পিছনে পাকিস্তানের ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’-দের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে নয়াদিল্লি নিশ্চিত।
কারা এই ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’? এক দিকে আসিফ আলি জারদারি ‘স্টেট অ্যাক্টর’ বা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন, ভারত সফরে এসে শান্তি প্রক্রিয়ার আবহ তৈরি করছেন, তখনই সেই প্রক্রিয়াকে বানচাল করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কারণ পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলি পাকিস্তান। সেনাবাহিনী রয়েছে। আইএসআই রয়েছে। তেমনই রয়েছে জেহাদি মোল্লাতন্ত্র। এরাই ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’, যারা চেষ্টা করছে পাল্টা বার্তা দেওয়ার।
আমেরিকায় নির্বাচন আসছে। মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা এখনও কাটেনি। দেশের নাগরিক সমাজ সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে। ব্রিটেন-সহ ইউরোপও সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে। ভারত প্রথম থেকেই এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে। কারণ সেনা প্রত্যাহারের অর্থ হল, পাক-সেনা তথা কিয়ানির উপর আমেরিকার নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি। কিয়ানিকে বাদ দিয়ে আমেরিকার পক্ষে তালিবান মোকাবিলা সম্ভব নয়। এ জন্যই কারজাইয়ের সঙ্গে কিয়ানিকে বৈঠকে বসিয়েছিল আমেরিকা। কারণ কারজাইকে সরিয়ে আবার আফগানিস্তানের তালিবানিকরণ ঘটাতে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তানেরও একটা অংশ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে লড়াইয়ে আমেরিকা যখন ওসামা বিন লাদেনকে সাহায্য করেছিল, তখন পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ছিল তালিবানের উপর। পাকিস্তানের বাজেট থেকে বড় অঙ্কের টাকা যেত আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানের মাদকদ্রব্য চোরাচালানে জড়িত ছিল পাক-সরকারও। পাকিস্তানের একটা অংশ আবার সেই ইতিহাসটাকেই ফিরিয়ে আনতে চাইছে।
আমেরিকা চায়, তালিবানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আরও বেশি সক্রিয় হোক। হাফিজ সইদদের রাশ টানা হোক। তাই জারদারি ভারতে আসার ঠিক আগেই ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্তা হাফিজ সইদের মাথার কোটি ডলার দাম ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। জারদারির সঙ্গে বৈঠকে মনমোহন সিংহ হাফিজ সইদের প্রসঙ্গ তুললেও তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাননি। কারণ মনমোহনও জানেন, সবটা জারদারির হাতে নেই।
কিন্তু আমেরিকা পাকিস্তানকে চাপে ফেলার চেষ্টা করাতেই এই নতুন বিপদ হল বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু কাবুলে হামলার ঘটনায় আমেরিকাই সব থেকে চাপে পড়ল বলে মনে করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ভারত মনে করছে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও বাড়ানো হোক। কিন্তু তার পরেও ভারতের উদ্বেগ কাটছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.