যার প্রথম দফায় গত কাল রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের বান্নুতে জেল ভেঙে প্রায় চারশো বন্দিকে মুক্ত করে তালিবান। যাদের অনেকেই তাদের ‘সঙ্গী’। জেল সূত্রের খবর, পলাতক ৩৮৭ জনের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ‘বিপজ্জনক’ জঙ্গি। প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আদনান রশিদও এই সুযোগে উধাও হয়েছে জেল থেকে। পরে তালিবানের এক মুখপাত্র এহসানউল্লা এহসান ঘটনার দায় স্বীকার করে বলেন, “আমরা বান্নু জেল আক্রমণ করে আমাদের বিশেষ সদস্যদের ছাড়িয়ে এনেছি।”
আক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় আফগানিস্তানে। শুধু রাজধানী কাবুলই নয়, একযোগে লোগার, পাখতিয়া এবং নঙ্গরহরে এ দিন হামলা চালায় জঙ্গিরা। তবে কাবুলের হামলার পিছনে মূলত তালিবান সহযোগী হক্কানি গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কাবুলে কতটা ভয়াবহ ছিল এ দিনের হামলা? এ দিন কাবুলের সাতটি জায়গায় হামলা চালায় তালিবান জঙ্গিরা। যেগুলির লক্ষ্য ছিল মূলত আফগান সরকারি ভবন, ন্যাটোর সদর দফতর এবং পশ্চিমী দেশের দূতাবাস। কাবুলের যে অংশে আজ হামলা চালাল তালিবান, সেটি শহরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ফলে এখানে নিরাপত্তার বেষ্টনীও যথেষ্ট কঠোর। জঙ্গিরা সেই বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করলে জোরদার সংঘর্ষ হয়। আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র সিদ্দিক সিদ্দিক সংবাদসংস্থাকে বলেন, “কাবুলের হামলায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর ১১ জন আহত হয়েছেন। তবে কোনও সাধারণ মানুষের আহত বা নিহত হওয়ার খবর নেই।” কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের দফতর থেকেও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আফগানিস্তানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণকে সবিস্তার জানান।
পরে তালিবানের মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ বিবৃতি দিয়ে বলেন, “আজ দুপুর একটায় আমাদের আত্মঘাতী সৈনিকরা ন্যাটোর সদর দফতর, আফগান পার্লামেন্ট এবং অন্যান্য কূটনৈতিক ভবনে হামলা চালিয়েছে। আমাদের শত্রুদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এর জন্য আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করেছি। এটাই আমাদের বসন্ত অভিযানের শুরু।” |
আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ গাড়ি। রবিবার কাবুলে। ছবি—এ পি |
কাবুলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ওয়াজির আকবর খান অঞ্চলে একটি পাঁচতারা হোটেল দখল করে নেয় জঙ্গিরা। ওই হোটেলকে ঘাঁটি করেই এর পর আফগান পার্লামেন্টে ঢোকার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। তবে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পিছু হটে তারা। আফগান পার্লামেন্টের কয়েক জন এমপি-ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে একজোট হয়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ওয়াজির আকবর খান অঞ্চলেই প্রথম বিস্ফোরণটি হয়। এর পর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় দশটি বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার সময় মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে আফগান সরকারি সূত্রে।
দখল করা হোটেল থেকেই বিভিন্ন দূতাবাসকেও নিশানা করে জঙ্গিরা। তাদের ছোড়া দু’টি রকেট ব্রিটিশ দূতাবাসের গেটে আঘাত করে। তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় দূতাবাস। ব্রিটিশ সরকারের তরফে পরে জানানো হয়, দূতাবাসের কর্মীরা সুরক্ষিত আছেন। আমেরিকা, জার্মানি এবং রাশিয়ার দূতাবাসের কাছেও বিস্ফোরণ হয়। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কোনও দূতাবাসকর্মীকে অবশ্য পাওয়া যায়নি। কাবুলের বাইরে আফগানিস্তানের আরও তিনটি প্রদেশ থেকেও হামলার খবর মিলেছে। লোগার প্রদেশের পুল-এ-আলম শহরে আফগান শিক্ষা দফতরের একটি ভবনে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গিয়েছে। পাখতিয়া প্রদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন দিকে গুলি চালাতে থাকে জঙ্গিরা। নঙ্গরহর প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদে সেনা অ্যাকাডেমিতেও তালিবান হামলা চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০১৪-র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করে নেবে বলে জানিয়েছে। ধাপে ধাপে সেনা সরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এই হামলার ফলে সেই প্রচেষ্টা বিঘ্নিত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
|
আরও কিছু তথ্য কাবুলে বারবার |