রাস্তা সরু। যান চলাচলের জায়গা নেই। বাসস্ট্যান্ড থাকলেও নেই যাত্রীদের দাঁড়ানোর ‘শেড’। ফুটপাথের দখল নিয়েছে ঠেলা গাড়ি থেকে মোটরবাইক। চার পাশে মাছ আর সব্জির বাজার। সব মিলিয়ে যানজটে জেরবার জামুড়িয়া শহর।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিবহণ পরিষেবার নামে শুধুমাত্র কংক্রিটের বাসস্ট্যান্ড ও শৌচাগার তৈরি করে দিয়েছে পুরসভা। ‘শেড’ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা। পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শহরকে যানজটমুক্ত করতে দু’বছর আগেই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম আমরা। পুলিশ প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে কী ভাবে যানজট রোখা যায়, তার চেষ্টা করা হবে।”
জামুড়িয়া শহরে প্রধান রাস্তায় অল্প তফাতে রয়েছে তিনটি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাইপাসে যাওয়ার রাস্তার পাশেই একটি ট্রাক টার্মিনাস ও ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। যদিও ফুটপাথের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে ট্যাক্সি। পেট্রোল পাম্প থেকে বাটা মোড় বরাবর থানা রোডে ‘নো এন্ট্রি জোনে’-র তোয়াক্কা না করেই মালগাড়িতে মাল ওঠানো নামানো চলছে। |
সিনেমা মোড় পর্যন্ত ফুটপাথে দাঁড় করানো রয়েছে ঠেলা, রিকশা, এমনকী বহুজাতিক কোম্পানির মডেল মোটরবাইক। তার মাঝেই সব্জি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সিনেমা মোড় থেকে আসানসোল যাওয়ার প্রধান রাস্তার দু’ধারে আবার মাছবিক্রেতাদের ভিড়। দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রেকার, ঠেলা। হরিপুর থেকে নন্ডী, একই ছবি সেখানেও। বছর খানেক আগে নন্ডী মোড়েই ট্রেকারের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক ছাত্রীর। ক্ষুব্ধ জনতা ওই ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই ফের একই অবস্থা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুটপাথ দখল বন্ধ করে শহরকে যানজটমুক্ত করতে জামুড়িয়া পুরসভা দু’বছর আগে পুলিশ-প্রশাসন, বাস মালিকদের সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন ও বণিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক করে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রধান রাস্তায় পণ্য পরিবহণ করা যাবে না। একই সময়ে রাস্তার দু’ধারে পণ্য নামানো যাবে না। যেখানে-সেখানে গাড়ি ‘পার্কিং’-ও নিষিদ্ধ। যদিও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।
আসানসোল মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের দাবি, “ফুটপাথ দখল হওয়ায় রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। এছাড়া যান চলাচলের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। ফলে যানজট হচ্ছে। দুর্ঘটনাও বাড়ছে। পরিবহণ কর্মীরা যথেষ্ট শৃঙ্খলাপরায়ণ। প্রশাসন লাগাতার উদ্যোগ করবে সমস্যা কমবে।” অন্য দিকে, ফুটপাথ জুড়ে ব্যবসায়ীদের ভিড় কমাতে ট্রাক টার্মিনাসের পাশে ১৫টি গুদামঘর তৈরি করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, বাইপাস রাস্তার পাশে ওই গুদামগুলিতে শহরের ব্যবসায়ীরা তাঁদের মালপত্র মজুত রাখবেন। কিন্তু দু’বছরের মধ্যে সেই পরিকল্পনাও কার্যকর হয়নি। বণিক সংগঠনের সদস্য অজয় খেতানের দাবি, “যানজটের জন্য কোনও ভাবেই দায়ী নন ব্যবসায়ীরা। পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা চান পরিকল্পনাগুলি কার্যকর করা হোক।” পুরপ্রধান অবশ্য জানান, এমইডি (মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট) এখনও পুরসভাকে ঘরগুলি হস্তান্তরই করেনি। |