সিটু এবং আইএনটিটিইউসি-র মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে সমবায় সমিতির পরিচালন পর্ষদের ভোট ভেস্তে গেল দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। রবিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই দু’পক্ষে বচসা বাধে। অভিযোগ, এক দল লোক বুথে ঢুকে ব্যালট ছিঁড়ে দেয়। এর পরেই নির্বাচন পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ভোট স্থগিতের কথা ঘোষণা করেন।
১৯৫৭ সালে গড়ে ওঠা ডিএসপি-র এই সমবায়ে সদস্য সংখ্যা ১০,১৩২। পরিচালন পর্ষদে প্রতিনিধি ৩৫ জন। দীর্ঘ দিন ধরে পর্ষদের ক্ষমতায় রয়েছে সিটু। এ বার সিটু এবং আইএনটিটিইউসি সব আসনে এবং আইএনটিইউসি ১৮টি আসনে প্রার্থী দেয়। আইএনটিটিইউসি এ বারই প্রথম প্রার্থী দেয়। এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ দুর্গাপুরের জয়দেব হিন্দি হাইস্কুলে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচনী আধিকারিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি-র সমবায় দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক এন সি মাজি। স্কুলের বাইরে ছিল প্রচুর পুলিশ।
ভোটগ্রহণ শুরু হতেই আইএনটিটিইউসি অভিযোগ তোলে, সিটু-র লোকজন বুথে ভুয়ো ভোটার ঢোকাচ্ছে। সিটু তা অস্বীকার করলে আইএনটিটিইউসি-র তরফে দাবি জানানো হয়, ভোট দেওয়ার পরে ভোটারদের আঙুলে কালি লাগানোর ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু উপস্থিত সিটু নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, এই ভোটে বরাবর ভোটদানের পরে সদস্যদের পাশবইয়ে স্ট্যাম্প দেওয়ার নিয়ম চলে আসছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের বচসা বাধে। সিটুর অভিযোগ, এই সময়ে আইএনটিটিইউসি কর্মীদের নেতৃত্বে এক দল বহিরাগত বুথে ঢুকে ব্যালট ছিঁড়ে দেয়। সিটু-র নির্বাচনী এজেন্টদের টানা-হ্যাঁচড়া করা হয়। নির্বাচনী আধিকারিক প্রথমে সকলকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তিনি ভোট স্থগিতের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ফের কবে ভোট হবে, তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে।
ভুয়ো ভোটার ঢোকানোর অভিযোগ অস্বীকার করে সিটু অনুমোদিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর আহ্বায়ক অরুণ চৌধুরীর দাবি, “আইএনটিটিইউসি-র হার ছিল অনিবার্য। তা বুঝেই ভোট বানচাল করল ওরা।” তাঁর আরও দাবি, দুর্গাপুর পুরসভার ভোট আসন্ন। তার আগে এই সমবায়ের ভোটে হার আইএনটিটিইউসি তথা তৃণমূলকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিতে পারত। তাই ‘পরিকল্পিত’ ভাবে তারা এই ‘গণ্ডগোল’ পাকায়।
আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, তাঁদের সংগঠনের কেউ ব্যালট ছেঁড়েননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “জাল ভোটার দিয়ে ভোট করিয়ে জেতার চেষ্টা করেছিল সিটু। কিন্তু প্রকৃত ভোটারেরা বাধা দেওয়ায় তা সফল হয়নি।” তাঁরও দাবি, ভোট হলে তাঁরাই জিততেন। পুরভোটের আগে তা আটকাতেই সিটু ‘গোলমাল’ পাকায়। ডিএসপি-র আইএনটিইউসি-র সহ-সম্পাদক দেবাশিস চৌধুরী আবার বলেন, “পরিচয়পত্রহীন ভোটারদের জোর করে ঢোকাচ্ছিল সিটু। আইএনটিটিইউসি পাল্টা জঙ্গিপনা চালায়। তাতেই ভোট ভেস্তে যায়। এর জন্য কিন্তু দু’পক্ষই দায়ী।” |