নিয়ম ভেঙে যাতায়াত করা পুলকার ধরতে শুরু হয়েছে অভিযান। অথচ, তার ফাঁক গলেই পরিবহণ আইন ভাঙছেন পুলকারের চালকেরা। গত শুক্রবার স্কুলের দিনে এ রকমই কিছু বেনিয়মের চিত্র ধরা পড়েছে আসানসোলের বিভিন্ন প্রান্তে। পুলিশের অবশ্য দাবি, সোমবার সকাল থেকেই ফের কঠোর অভিযান চলবে শহর জুড়ে।
আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “পুলকার চালক ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু যাত্রী কমিয়ে অটো ও পুলকারগুলি চালানো যায় কি না দেখা হচ্ছে। সমস্যা দ্রুত মিটবে।”
শুক্রবার। সকাল আটটা বেজে দশ মিনিট। ভগৎ সিংহ মোড়ের কাছে সেনর্যালে রোড ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যাচ্ছে পড়ুয়া বোঝাই অটো রিকশা। নিদিষ্ট আসন সংখ্যার থেকে অনেক বেশি পড়ুয়া সেখানে। বসে আছেন কয়েক জন অভিভাবকও। চালককে প্রশ্ন করে জানা গিয়েছে, কল্যাণপুরের কাছে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া তারা। নিয়ম তো মানা হয়নি, যদি পুলিশ ধরে? চালকের সংক্ষিপ্ত উত্তর, “তখন দেখা যাবে”।
দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট। আসানসোলের লোকো মোড়ের কাছে জিটি রোডের পার্শ্ববর্তী স্কুলগুলির পড়ুয়াদের নিতে এসেছে একাধিক ছোট পুলকার। অনেক চালকই পুলিশের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। তাঁদের কথা বলার ফুরসৎ নেই। তড়িঘড়ি পড়ুয়া বোঝাই করেই দে ছুট। |
|
|
চেপেচুপে এ ভাবেই যাতায়াত। হাটন রোডে। |
গাড়ি নেই, ভরসা রুটের বাসই। লোকো ট্যাঙ্ক মোড়ে |
|
দুপুর দেড়টা। হাটন রোডের দিকে ছুটে যাচ্ছে এক ডজনেরও বেশি পড়ুয়া বোঝাই একটি লাল রঙের ভ্যান। গাড়িতে তো আট জনের বেশি পড়ুয়া চাপানোর কথা নয়? চালকের পাল্টা প্রশ্ন, “কে বলল?” সাত দিন আগেই তো পুলিশ এই নির্দেশ দিয়েছে। এ বার চালকের জবাব, “আমি জানি না।” তবে, আর দাঁড়াননি তিনি।
দুপুর দু’টো কুড়ি। আসানসোলের গির্জা মোড়। দেখা গেল, পরপর কয়েকটি ছোট পুলকার, অটো রিকশা সবক’টিই নিয়ম ভেঙে চলেছে পড়ুয়া বোঝাই করে।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুর্গাপুর এসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারা-সহ অধিকাংশ পুলিশ কর্মীই সেদিন সকাল থেকে দুর্গাপুরে ছিলেন। যৎসামান্য পুলিশকর্মী দিয়ে আসানসোল মহকুমার দৈনন্দিন কাজকর্ম হয়েছে। স্বভাবতই পুলকার অভিযান সেদিন হয়নি। তারই ফাঁকে সকাল থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসেন চালকেরা। আসানসোলের এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এক দিন সামান্য শিথিল ছিল বলে ভাবার কারণ নেই, পুলিশি অভিযান আর চলবে না। সোমবার সকাল থেকেই আমরা আবার কঠোর ভাবে অভিযান শুরু করব।” ভাস্করবাবু আরও জানিয়েছেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আসানসোল মহকুমার অন্যান্য প্রান্ত এবং দুর্গাপুরেও পুলকার অভিযান চালানো হবে। |
নিরাপত্তার পরোয়া না করে এ ভাবেই স্কুলের পথে অভিভাবক। গির্জামোড়ে। |
দেরিতে হলেও শহর জুড়ে পুলকার অভিযান শুরু হওয়ায় সুফল মিলেছে বেশ কিছুটা। পরিবহণ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে সব পুলকার চালক এতদিন শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তাঁদের অনেকেই এখন রাস্তায় গাড়ি বের করছেন না। ফলে অবশ্যই দুর্ভোগ বেড়েছে পড়ুয়াদের। দিন কয়েক ধরে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা রুটের বাসে চেপে স্কুলে যাতায়াত করছে এক রকম বাদুর-ঝোলা হয়েই।
পুলিশি অভিযান শুরু হতেই প্রতিবাদে নামেন পুলকার চালকেরা। তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার বেশি পড়ুয়া বহন করতে দিতে হবে তাঁদের। না হলে আর্থিক সঙ্কটে পড়বেন তাঁরা। দাবি না মানা হলে তাঁরা আর গাড়ি চালাবেন না।
এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুলকার বন্ধ হওয়ার কোনও খবর নেই তাঁর কাছে। সব পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা করতে রাজি তিনি। তবে পুলকার অভিযান বন্ধ হবে না।
নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার কিছু বেশি পড়ুয়া বহন করতে চেয়ে পুলিশি অনুমতির দাবি তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতারা। কিন্তু পুলিশ সেই দাবি মানতে রাজি নয়। পুলকার সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইন ও নির্দেশ ছত্রেছত্রে মেনে চলতে হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন এডিসিপি (ট্রাফিক)।
লুকিয়ে চুরিয়ে বা শাসক দলের পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতাদের মদতে চলা বেআইনি পুলকারের দাপাদাপি পুলিশ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।
|
আসানসোলে ছবিগুলি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |