জঙ্গলমহলের তিন জেলায় মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দাদের নিখরচায় চোখের জটিল রোগের চিকিৎসা করায় উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পুরুলিয়ার পাড়ায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে এই চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। মঙ্গলবার এই হাসপাতালের শিলান্যাস করেছেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত রাজ্যের জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাওবাদী উপদ্রুত ২৩টি ব্লকের বাসিন্দাদের কাছে বিনামূল্যে চোখের রোগের উন্নতমানের চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য মিশন, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছে। পুরুলিয়ার পাড়ার এই হাসপাতালটিকে ‘রেফারেল’ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জানুয়ারি মাসে অনুমোদন দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। জাতীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের অধিকর্তা দিলীপ ঘোষ বলেন, “এই হাসপাতালে জঙ্গলমহলের তিনটি জেলার ২৩টি অনগ্রসর ব্লকের বাসিন্দারা নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন।” তাঁর আশা, “এর ফলে চোখের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য আর এলাকার বাসিন্দাদের কলকাতার উপর ভরসা করতে হবে না।” পাড়া গ্রামের অদূরে বরনডাঙ্গায় গত ১০ বছর ধরে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারায় বিশ্বাসী ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় চোখের রোগের চিকিৎসা করে আসছে।.
দিলীপবাবু পাড়ার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে জানুয়ারি মাসে ‘রেফারেল’ হাসপাতাল (অন্য জায়গা থেকে এখানে রোগীদের ‘রেফার’ করা যাবে) গড়ার প্রস্তাব দেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীও অনুমোদন দেন। এরপরেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ টাকা বরাদ্দ করে। দিলীপবাবু জানান, গত দু’বছর ধরে তাঁরা ওই সংস্থাটিকে সহায়তা করে আসছেন। অনেক বড় চিকিৎসক এখানে রোগীদের চিকিৎসা করতে আসেন। তাই এখানে রোগীদের ভাল পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাও বলেন, “জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় চোখের ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায় না। তাই এই প্রস্তাব পেয়ে আমরা টাকা অনুমোদন করতে দেরি করিনি।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সম্পাদিকা রঞ্জনা সেনগুপ্ত বলেন, “১০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে চক্ষুরোগের শিবির করে এখানে রোগী এনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হবে। ছানি অস্ত্রোপচার ছাড়াও রেটিনার সমস্যা ও গ্লুকোমার চিকিৎসাও করা হবে।” |