হুগলি জেলা সদর হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহের বরাত দেওয়া নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিল চুঁচুড়ার একটি ঠিকাদার সংস্থা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ জেলার কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল তারা। কিন্তু সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বরাত দেওয়া নিয়ে কোনও বেনিয়ম বা পক্ষপাত হয়নি।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “দরপত্রে ১২টি ঠিকাদার সংস্থার যোগ্যতামান এক হয়ে যাওয়ায় লটারি করা হয়। লটারিতে বসিরহাটের একটি সংস্থার নাম ওঠে। এর মধ্যে কোনও বেনিয়ম হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটির ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, জেলা হাসপাতালে কোনও নতুন ঠিকাদার সংস্থাকে খাবার সরবরাহের বরাত দেওয়া হয় না। যারা ওই বরাত পায়, তাদের স্বাস্থ্য ভবনের তালিকাভুক্ত ‘বি-ক্যাটিগরি’র হওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, ওই সংস্থার অন্তত ৪৫১টি শয্যাবিশিষ্ট কোনও সরকারি হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। তা, ছাড়া যে জেলায় সংস্থাটি কাজ করবে, সেখানকার পুরসভার ‘ট্রেড লাইসেন্স’ ও খাদ্য দফতরের ‘ফুড লাইসেন্স’ থাকা আবশ্যিক। সংশ্লিষ্ট জেলায় সংস্থাটির একটি অফিস-ঘরও থাকতে হবে। চুঁচুড়ার সংস্থাটির অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে বসিরহাটের যে সংস্থাটি বরাত পেয়েছে, তাদের জেলা হাসপাতালে খাবার সরবরাহের অনেক যোগ্যতামানই নেই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ২৮ নভেম্বর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল-সহ জেলার কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য দরপত্র জমা নেওয়া হয়। জেলা হাসপাতালের জন্য যারা দরপত্র জমা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ১২টি সংস্থার যোগ্যতামান এক হয়ে যায়। এর পরেই লটারি হয়।
চুঁচুড়ার সংস্থাটির কর্ণধার শৈবাল চক্রবর্তীর অভিযোগ, “আমাদের নামই লটারিতে উঠেছিল। কিন্তু কারসাজি করে অন্য সংস্থাকে দেওয়া হল। এর পিছনে সিএমওএইচ-সহ জেলা কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্তার ভূমিকা রয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিএমওএইচ উন্মেষ বসু। তাঁর দাবি, দরপত্রে ঠিকাদার সংস্থার যোগ্যতামান এক হয়ে গেলে অনেক সময়েই লটারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই পদ্ধতি মেনেই বসিরহাটের সংস্থাটি জেলা হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে খাবার সরবরাহের বরাত পেয়েছে। উন্মেষবাবু বলেন, “যে সংস্থাটি এ নিয়ে অভিযোগ করছে, তাদের বিষয়টি নিয়ে আমি ওই হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে কথা বলব। ঠিক কী হয়েছে, তা নিশ্চিত করে জানা যাবে।”
হাসপাতালের সুপার শ্যামল চক্রবর্তীর দাবি, “হাসপাতালে কে খাবার সরবরাহ করবে, তা দেখা সুপারের কাজের মধ্যে পড়ে না। পুরো বিষয়টি সিএমওএইচ এবং স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে হয়। আমাকে যে সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আমি সেই সংস্থাকে দিয়েই কাজ করাচ্ছি।” দরপত্র বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বা লটারির সময়ে তাঁকে ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন শ্যামলবাবু। |