মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, পরিবহণে আর ভর্তুকি জোগানো যাবে না। পরিবহণ নিগমগুলিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কর্মীদের মধ্যে মানসিকতার বদল হওয়ায় তাঁর দাওয়াইয়ের সুফল মিলতে শুরু করেছে। এ বার পরিবহণ নিগমগুলিতে ‘অসুস্থ ও বসে থাকা’ কর্মীদের আগাম অবসর দিয়ে সেই জায়গায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে চলেছে নতুন সরকার। ‘কাজে গতি আনতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার জানান পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিন চারটি পরিবহণ নিগমের কর্তাদের সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম, পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম এবং কলকাতা ট্রাম সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রীর এ দিনের বৈঠকে আগাম অবসর এবং অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়। তবে কোন নিগমে কী ভাবে কত অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হবে, আগাম অবসরে ইচ্ছুক কর্মীদেরই বা কী হারে কোন খাতে টাকা দেওয়া হবে এ-সব বিষয়ে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হবে কোন পদ্ধতিতে? পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি ঠিক করতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হবে।” তা হলে কি নিগমগুলিতে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ একেবারে বন্ধই হয়ে গেল? মন্ত্রী বলেন, “এমনিতেই নিগমগুলিতে কর্মী উদ্বৃত্ত। তাই আপাতত স্থায়ী কর্মী নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।”
ঠিক কাদের ‘অসুস্থ এবং বসে থাকা’ কর্মী বলা হচ্ছে?
বিভিন্ন পরিবহণ নিগমে স্থায়ী কর্মীদের একটা বড় অংশ ‘কম কাজ করে বেশি বেতন’ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মদনবাবু। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, কোনও ডিপোয় তেলের পাম্পের কর্মী সারা দিনে হয়তো মাত্র দু’বার বাসে তেল ভরে মাসে ৩২ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। কোথাও চোখে কম দেখার কারণে বাসের চালক বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এমনটা তো চলতে পারে না। এই অবস্থা পাল্টানোর জন্য প্রত্যেকের কাজের পরিমাপ করা হবে। সেই জন্য ‘মানবসম্পদ ব্যাঙ্ক’ তৈরি করা হচ্ছে।” এই ধরনের কর্মীদের আগাম অবসর দেওয়া হবে অথবা পর্যাপ্ত কাজের জায়গায় বদলি করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন পরিবহণমন্ত্রী।
বিভিন্ন নিগমে আগাম অবসর নিতে ইচ্ছুক অনেক কর্মী রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন মদনবাবু। তবে বয়স বা শারীরিক কারণে কমজোরি কর্মীদের বক্তব্য, আগাম অবসর নিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তার জন্য সরকার কী কী সুবিধা দেবে, সেগুলো আগে জানা দরকার। পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “সব কিছু চূড়ান্ত করে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ আকারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে। তিনি অনুমোদন দিলে তবেই এ ব্যাপারে এগোবে আমার দফতর।”
নিগমগুলোর হাল ফেরাতে দফতরের হাতে থাকা ‘উদ্বৃত্ত’ জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার সুযোগ যাচাই করার জন্য কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। পরে তিনি জানান, উদ্বৃত্ত জমি নিয়ে পরিবহণ দফতর ‘ভূমি ব্যাঙ্ক’ তৈরি করবে। তাঁর মন্তব্য, “সরকারি বাস ডিপোয় আর যা-ই করা হোক, প্রোমোটারকে দিয়ে বাড়ি তৈরি করা হবে না।” পেট্রোল পাম্প তৈরি করার জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি) জমি চাইলে সরকার তাতে রাজি আছে বলেও জানান পরিবহণমন্ত্রী। |