মানুষই তাঁদের ‘সংযত’ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে বলে মন্তব্য করলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর নতুন সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। পলিটব্যুরোয় যাওয়ার জন্য বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুকে বুধবার বিধানসভায় খানিকটা প্রথা ভেঙেই সংবর্ধনা দেন বাম বিধায়কেরা। সহকর্মীদের সংবর্ধনার প্রত্যুত্তরে সূর্যবাবু ‘সংযত’ হওয়ার শিক্ষার কথা বলেছেন।
বস্তুত, ‘সংযত’ থেকেও বিরোধী দলনেতা হিসাবে সূর্যবাবু যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিঁধছেন, যুক্তি এবং তথ্য দিয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন, সেই ভূমিকারই ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে এ বার তাঁকে পলিটব্যুরোয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংবর্ধনা দিতে গিয়ে এ দিন বাম বিধায়করা বলেন, ১১ মাসেই বিরোধী দলনেতা হিসাবে সূর্যবাবু বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর সংযত ভাষা ও ব্যবহারেরও প্রশংসা করেন তাঁরা। জবাবে সূর্যবাবু বলেন, “মানুষ আমাদের এই আসনে বসিয়েছে। মানুষই আমাদের ভাষা এবং ব্যবহার সংযত করার শিক্ষা দিয়েছে। সেই শিক্ষা নিয়েই চলছি।” সূর্যবাবুর কথায় স্পষ্ট ভোটে পরাজয় থেকেই সিপিএম নেতারা ‘সংযত’ হওয়ার শিক্ষা নিয়েছেন। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “নেতারা যাতে ভুল করতে না-পারেন, তার জন্য সব সময়ে তাঁদের উপরে নজরদারি রাখতে হবে।” বাম বিধায়কদের কাছে এ ভাবে সংবর্ধনা পেয়ে রীতিমতো লজ্জিত সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “আপনারা যা করছেন, তাতে আমার চাকরি চলে যেতে পারে!” দলের উচ্চ কমিটিতে নির্বাচিত হলে এ ভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার রেওয়াজ সিপিএমে নেই। এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের পার্টিতে ব্যক্তি নয়। দলই সব।” বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের ঘরে এ দিন দুপুরে সূর্যবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘরোয়া আসরের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ডিএসপি-র বিধায়ক প্রবোধ সিংহ এবং বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান। সংবধর্না শেষে মোবাইল ফোনে সূর্যবাবুর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য বিধায়কদের মধ্যে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায়!
মন্ত্রী থাকাকালীন সূর্যবাবুর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল, তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেন না। তাঁর কাছ থেকে সাধারণত কোনও প্রশ্নের জবাব পাওয়া যেত না। কিন্তু বিরোধী দলনেতা হিসাবে সূর্যবাবু প্রায় প্রতিদিনই বিধানসভায় তাঁর কক্ষে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সূর্যবাবু বলেন, “মন্ত্রী থাকার সময়ে সাংবাদিকদের অভিযোগ ছিল, আমার সঙ্গে তাঁরা বিশেষ কথা বলতে পারেন না। কিন্তু নতুন ভূমিকায় দায়িত্ব নেওয়ার পরে এখন সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার যা সম্পর্ক, শুধু তাঁদের যদি ভোট নেওয়া যায়, তা হলে আমি জিতে যাব!” বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বিধানসভার সব কমিটির চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। তার আগে সূর্যবাবুরও বাম বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক ডাকার কথা। কিন্তু রাজ্য সম্মেলনের জন্য আরএসপি-র বিধায়কেরা উত্তরবঙ্গে থাকায় স্পিকারকে তাঁর বৈঠক পিছনোর জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ করার ভাবনাচিন্তা চলছে। |