আগের সরকার চুক্তিতে নিযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের দাবিতে কান দেয়নি। রাজ্যের নতুন সরকারও এই ব্যাপারে আদৌ উদ্যোগী না-হওয়ায় এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের কম্পিউটার খাতা দেখবে না বলে বুধবার জানিয়ে দিয়েছে অল বেঙ্গল কম্পিউটার টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন বা এবিসিটিএ।স্থায়ী করার জন্য চুক্তি-ভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষকেরা ২০০৬ সাল থেকেই আন্দোলন করছেন। কিন্তু আশ্বাস দিয়েও তখনকার বামফ্রন্ট সরকার এ ব্যাপারে আর সাড়াশব্দ করেনি বলে এবিসিটিএ-র অভিযোগ। নতুন সরকারও তাঁদের স্থায়ী করার দাবিকে আমল না-দেওয়ায় তাঁরা পরীক্ষার খাতা দেখার কাজ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন বলে জানান এবিসিটিএ-র সম্পাদক রাজেশ ভট্টাচার্য। তবে স্কুলশিক্ষা দফতর এই ‘অনভিপ্রেত পরিস্থিতি’র সামাল দিতে পারবে বলে মনে করেন স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন। তিনি বলেন, “এখন প্রায় সব স্কুলেই নিয়মিত কম্পিউটার শিক্ষকও আছেন। সব খাতা প্রয়োজনে তাঁরাই দেখবেন।”
২০১০ সালেও উচ্চ মাধ্যমিকের কম্পিউটার সায়েন্স ও অ্যাপ্লিকেশনের খাতা দেখার কাজ প্রাথমিক ভাবে বয়কট করেছিল এবিসিটিএ। পরে অবশ্য পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা ভেবে খাতা দেখার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই সময় স্কুলশিক্ষা দফতর চুক্তি-ভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষকদের স্থায়ী করার দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিল বলে জানান রাজেশবাবু। কিন্তু কার্যত কিছুই হয়নি।
এবিসিটিএ-র দাবি, তাদের সদস্যদের স্থায়ী করার সঙ্গে সঙ্গে বেতনের দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে। সমিতির বক্তব্য, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল কোনও বেতন না-নেওয়ায় বেশির ভাগ চুক্তি-ভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষক কার্যত বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন। রাজেশবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসছেন না। তাই সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম আমরা। আমাদের সদস্যেরা উচ্চ মাধ্যমিকের কম্পিউটার খাতা দেখবেন না।”
ওই সব কম্পিউটার শিক্ষকের সমস্যা মেটাতে অসুবিধা কোথায়? ২০০০ সালে রাজ্যের স্কুলগুলিতে ‘কম্পিউটার লিটারেসি’ বা কম্পিউটার-সাক্ষরতা নিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতর এবং তথ্য-প্রযুক্তি দফতরের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ‘নোডাল এজেন্সি’ হিসেবে নিয়োগ করা হয় রাজ্য সরকারের অধীন সংস্থা ওয়েবেলকে। তার পরে ওয়েবেল নিজেরা এবং আরও দু’টি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রাজ্যের ৫০০ স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ করে। সেই চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত। ২০০৬ সালে ওই দু’টি বেসরকারি সংস্থা বিদায় নেয়। তাদের জায়গায় দায়িত্ব নেয় ন’টি নতুন বেসরকারি সংস্থা। আগের সংস্থাগুলি বিভিন্ন স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে যাঁদের নিয়োগ করেছিল, তাঁদের অনেকের দায়িত্বই চলে যায় নতুন সংস্থার হাতে। কিন্তু ওই সব সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংস্থাগুলি আর চুক্তি-ভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষকদের দায়িত্ব নেয়নি। সেই কারণে ওই শিক্ষকেরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান স্কুলশিক্ষা সচিব। |