নববর্ষের প্রথম দিন থেকে কলকাতা, সল্টলেক এবং হাওড়ায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত জৈব সব্জি বিক্রির বিশেষ ব্যবস্থা করছে সরকার। সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল, এ বার চালু হবে বিক্রি। তা পাওয়া যাবে ২৫টি মাদার ডেয়ারি বুথে। কেন্দ্রীয় হর্টিকালচার মিশনের সহায়তায় রাজ্য হর্টিকালচার দফতরের উদ্যোগে এই প্রকল্পে দালাল বা ফড়েদের এড়িয়ে চাষির কাছ থেকে সরাসরি ওই সব্জি আনা হবে শহরে।
নদিয়া জেলার ফুলিয়া এবং চাকদহের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ওই সব্জি প্রতি দিন শহরে আনা হবে। প্রথম পর্যায়ে মিলবে পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, করলা, ঢ্যাঁড়শ, শসা, লঙ্কা আর পেঁপে। প্রাথমিক ভাবে কম সব্জি আনা হলেও জোগান দ্রুত বাড়ানো হবে বলে জানান রাজ্য হর্টিকালচার দফতরের এগ্জিকিউটিভ শিবাজি রায়। তিনি বলেন, “কয়েক দিন পরীক্ষামূলক ভাবে এ ব্যবস্থা চলুক। অসুবিধেগুলি দেখে নিয়ে বুথের সংখ্যা ও সব্জির পরিমাণ বাড়ানো হবে।” সব্জি বিক্রির জন্য নির্বাচিত বুথগুলির চারটি সল্টলেকে, একটি লেকটাউনে, দু’টি হাওড়ায়, দু’টি উত্তরপাড়ায়, চারটি চন্দননগরে এবং বারোটি উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতায়।
প্রতি দিন ভোরে গ্রামেই চাষিরা সব্জি বাছাই করবেন। টাটকা রাখার জন্য তা ভরা হবে প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ প্যাকেটে। হর্টিকালচার বিভাগের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যান তা পৌঁছে দেবে বিভিন্ন বুথে। শিবাজিবাবু জানান, সব্জির দাম কখনওই কলকাতার বাজারের থেকে বেশি হবে না। বরং কিছুটা কম হতে পারে। কারণ, এই প্রক্রিয়ার মাঝে কোনও ফড়ে বা দালাল নেই। পাশাপাশি, জাতীয় হর্টিকালচার মিশনের আর্থিক সহায়তার এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে।
চাকদহের সিলিন্দা, শুটরা বা মথুরাপুরের মতো দশটি গ্রামের অন্তত একশো হেক্টর জমিতে তিনশো চাষি ‘বায়ো পরিবার’ নামে একটি সংগঠনের কারিগরি সহায়তায় নিজেরাই জৈব সার এবং কীটনাশক তৈরি করে সব্জি চাষ করছেন। সেগুলি নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া ফুলিয়ার অগ্রণী চাষি সহদেব বসাকের নেতৃত্বে সেখানে যে ২৮টি ফার্মার্স ক্লাব রয়েছে, তাদের কাছ থেকেও সব্জি নেওয়া হবে।
ওই সব জায়গার সব্জিতে রাসায়নিক অবশেষ থাকছে কি না, তা পরীক্ষা করিয়ে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন চাষিরা। কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থার কাছ থেকেও জৈব চাষের ছাড়পত্র নেওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছে বলে জানান বায়ো পরিবারের কর্ণধার নীতীন রায়। হর্টিকালচার দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস চান জৈব পদ্ধতিতে সব্জি চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহিত করতে। দীর্ঘ দিন ধরে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে জমি উদ্ধার করার জন্য জৈব চাষই একমাত্র উপায় বলে মনে করেন তিনি। উজ্জ্বলবাবুর কথায়, “জৈব পদ্ধতির চাষে উৎসাহিত করে ওই রাসায়নিক বিষমুক্ত সব্জির উৎপাদন বাড়ানোই আমাদের উদ্দেশ্য। ইউরোপে জৈব চাষের নানা রকম সব্জির বিপুল চাহিদা। উজ্জ্বলবাবু মনে করেন, “এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলকাতার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চাষিদের সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া যাবে। সব্জি বিদেশে রফতানি করতে পারলে চাষিরাও উৎসাহিত হবেন।” |