সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে তাঁদের অবস্থান যে ঠিক ছিল, তা দেরিতে হলেও সিপিএম স্বীকার করতে ‘বাধ্য’ হয়েছে বলে দাবি করলেন আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে দলের রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বুধবার প্রবীণ আরএসপি নেতা ক্ষিতিবাবুর বক্তব্য, “আমরা অনেক আগেই সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নীতির সমালোচনা করেছিলাম। জমি কেড়ে নেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান ছিল আমাদের। রাজ্য সরকারকে আপত্তির কথা জানিয়েও ছিলাম। আমাদের ওই অবস্থান যে ঠিক ছিল, সেটা দেরিতে হলেও সিপিএম স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসেও তা স্পষ্ট হয়েছে।” এর পরেই তাঁর আক্ষেপ, “সিপিএমের ওই ভুল নীতির ফলে রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় চলে এল!” প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রাম-পর্বে ‘প্রতিবাদী’ ক্ষিতিবাবু এক বার মন্ত্রী হিসাবে কিছু দিন মহাকরণে যাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন। |
ওই সভায় বালুরঘাটের আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার অভিযোগ করেন, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভুল নীতি ছাড়াও বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের পরাজয়ের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল সিপিএমের কর্মী এবং নেতাদের একাংশের ‘ঔদ্ধত্য’। প্রশান্তবাবু বলেন, “মমতাকে আমরাই ক্ষমতায় এনেছি। সিপিএমের কর্মীদের তখন এত দাপট এবং ঔদ্ধত্য দেখে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেন। মানুষকে মানুষ বলে জ্ঞান না-করার জন্যই মমতা ক্ষমতায় চলে এসেছেন।”
আরএসপি নেতারা এ দিন অবশ্য নানা প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেছেন। ক্ষিতিবাবু অভিযোগ করেন, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে সম্প্রদায়গত ভাবে মানুষকে আলাদা করার চেষ্টা করছে বর্তমান রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, “ইমামদের ভাতা দেওয়া হল। তবে গরিব পুরোহিত এবং ধর্মযাজকেরা কেন ভাতা পাবেন না? আমরা রাজ্যে সম্প্রীতি সৌহার্দ্য রক্ষার চেষ্টা করে চলেছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, এক দিকে দিল্লির সরকারের ভ্রান্ত নীতি এবং তার সহযোগী তৃণমূল দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করছে। অন্য দিকে, দিল্লিতে গিয়ে যোজনা কমিশনের বাড়তি বরাদ্দ আদায়ের কথা বলা হচ্ছে। তাঁর দাবি, “বাম আমলেও এমন প্রকল্প জমা দিয়ে যোজনা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির চেষ্টা হয়েছিল। পরে কোনও টাকাই মেলেনি।” আরএসপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী এন কে প্রেমচন্দ্রনের অভিযোগ, “নয়া উদারনীতির নামে সরকার একের পর এক জনবিরোধী নীতি নিচ্ছে।”
সমাবেশে ভিড় হয়েছিল যথেষ্ট। ভিড়ের কথা বলেই প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতিবাবুর দাবি, “দশ মাসেই তৃণমূল জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে স্বৈরতন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সেই জন্যই মানুষের ভুল ভাঙছে। বামেদের দিকে ঘুরতে শুরু করেছেন সাধারণ গরিব মানুষ।” পঞ্চায়েত ভোট থেকেই ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র লড়াই শুরুর জন্য কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানান আরএসপি-র কার্যনির্বাহী রাজ্য সম্পাদক। এ বারের রাজ্য সম্মেলন থেকেই দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় ক্ষিতিবাবুর আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা। রাজ্য সম্মেলন চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। |