বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিয়ে হওয়ার কথা নাসরিন সুলতানার। আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়ে গেলেও থমকে গিয়েছে বিয়ের আয়োজন। ফসল বিক্রি করে মেয়ের বিয়ের খরচ জোগানোর কথা ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ইছামতীর জল জমিতে ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ফলে বিয়ে আদৌ হবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন বসিরহাটের সংগ্রামপুর শিবহাট পঞ্চায়েতের চৌর গ্রামের নাসরিনের পরিবার।
ইছামতীর কাছেই বাড়ি নাসরিনদের। তাঁর দাদা ইউনুস গাজি বলেন, “ঋণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম। ঠিক ছিল বেগুন বিক্রির টাকায় বোনের বিয়ের খরচ জোগাব। গত পনেরো দিনে ইছামতীর জল বাঁধ উপচে জমিতে ঢুকে খেত ভাসিয়েছিল। দিন কয়েক আগে বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢোকায় যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বোনের বিয়ে কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না। হয়তো বিয়ে বন্ধ রাখতে হবে।” |
তবে শুধু ওই একটি পরিবারই নয়, গত কয়েকদিনের ঝড়বৃষ্টি এবং মাঝেমধ্যে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বসিরহাট মহকুমায় ক্ষতি হয়েছে বহু মানুষের। কয়েক হাজার বাড়ি ভেঙেছে। নদী উপচে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকেছে। বোরো-সহ অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেগুন, উচ্ছে, লাউ, কুমড়ো, কপি, পটল, লঙ্কা খেত ভেসে ফসল নষ্ট হয়েছে আব্দুল গফ্ফর গাজি, অহিদর রহমান গাজি, রবিউল ইসলাম, সহিদুল গাজি-সহ অনেকেরই। নোনা জলে গাছ নষ্ট হওয়ায় বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাহাবুর রহমান গাজি। তাঁর কথায়, “প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলাম। গাছে মোচাও হয়েছিল। নোনা জল লেগে তা ঝরে পড়েছে। কী করে ঋণ শোধ করব বুঝতে পারছি না।”
মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে বেড়মজুর, মণিপুর, আতাপুর এবং কোড়াকাটি-সহ সন্দেশখালির-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি-১ ব্লক, হাসনাবাদ, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া এবং বসিরহাটের দু’টি ব্লকেও বোরো-সহ অন্য সব্জির ক্ষতি হয়েছে।
বসিরহাট মহকুমা কৃষি আধিকারিক মুরারিমোহন বরকন্দাজ বলেন, “ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ফলে এখনও পর্যন্ত মহকুমায় ১,২৬১ হেক্টর বোরো, ৭৯৯ হেক্টর শাকসব্জি, ২,৫৩ হেক্টর তিল, ৪,৬৬ হেক্টর পাট, ৩০ হেক্টর মুগ এবং ২০ হেক্টর কলা ও পেঁপে চাষের ক্ষতি হয়েছে। ইছামতী সংলগ্ন চৌর, আমরকাটি, নলকোড়া, বাঁশঝাড়ি এবং মল্লিকপুরে বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢোকায় সেখানে প্রায় ১০৮ হেক্টর ধান, পাট, কলা এবং শাকসব্জি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” |