ভূমিকম্পে আতঙ্ক জেলায়
কেটলিসুদ্ধ জল পড়ে গেল মাটিতে
কলেই চমকে গিয়েছেন।
নদী-পুকুরের জল ফুলে উঠল। খাট নড়ে উঠল। গরু পালাতে চাইল দড়ি ছিঁড়ে। এমন আরও কত ঘটনা। তবে, বুধবার দুপুরে সেই চমক কয়েক সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয়নি। সম্বিত ফিরতে সকলেই বুঝেছেন, ভূমিকম্প হয়েছে। আর তা নিয়ে আলোচনা চলেছে রাত পর্যন্ত।
তখন দুপুর ২টো বেজে গিয়েছে। বসিরহাটের বাসিন্দা সোনা মণ্ডল পুকুরে স্নান করতে নেমেছিলেন। দেখলেন, জল কেমন টলমল করছে। ভয় পেয়ে তিনি লোকজন ডাকেন। কয়েক মুহূর্তের অবশ্য জল শান্ত। হিঙ্গলগঞ্জে যাবেন বলে হাসনাবাদ ফেরিঘাট থেকে নৌকোয় উঠেছিলেন হাসনাবাদের বাসিন্দা রমেন সাহা। মাঝনদীতে হঠাৎ নৌকা টলে উঠল। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে নৌকার গায়ে। আতঙ্কে যাত্রীরা চিৎকার করে ওঠেন। মাঝি অবশ্য নৌকা সামলে নেন। রমেনবাবু বলেন, “আর একটু হলেই নৌকাটি তলিয়ে যেত। বিনা ঝড়বৃষ্টিতে নদীর জল যে এতটা ফুলে উঠতে পারে, আগে দেখিনি।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন এলাকার রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, ইছামতী, কালিন্দি-সহ বিভিন্ন নদীর জল ফুলে উঠেছিল। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
ক্যানিংয়ে বাড়িতে ফাটল। ছবি: সামসুল হুদা।
মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়। হিঙ্গলগঞ্জের সর্দারপাড়ায় নদীর ধারে মৎস্যজীবীদের দু’টি নৌকা বাঁধা ছিল। ভূমিকম্পের চোটে দড়ি ছিঁড়ে নৌকা দু’টি ভেসে যায়। হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দুপুরে খাটে শুয়েছিলাম। হঠাৎ খাট নড়ে উঠল। প্রথম বার গুরুত্ব দিইনি। দ্বিতীয় বারও একই ঘটনা। বাইরে বেরিয়ে আসি। দেখি মহিলারা শাঁখ বাজাচ্ছেন। সামনে স্কুলের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমে এসেছে।”
কাকদ্বীপের সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এলাকায় সর্তকতা জারি করা হয়। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য ও কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক রাহুল মজুমদার জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দা এবং মৎস্যজীবীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তবে, ভূমিকম্পের ফলে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হাতাহতেরও কোনও খবর নেই। নদীতে নৌকা বা ভুটভুটি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যানিং শহরে চায়ের দোকান রয়েছে সত্যপ্রিয় ভুঁইয়ার। তিনি চা বানাচ্ছিলেন। তখনই মাটি কেঁপে উঠল। সত্যপ্রিয়বাবুর কথায়, “হঠাৎ কেটলিসুদ্ধু জল মাটিতে পড়ে পড়ে গেল। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে হুগলিতেও। গোঘাটের নকুণ্ডা গ্রামের প্রৌঢ়া নীলা কুণ্ডু খাটে শুয়ে টিভি দেখছিলেন। খাট নড়ে উঠতেই তিনি ভাবেন, দূরে কোথাও বোমাবাজি হচ্ছে। পরে লোকমুখে ঘটনার কথা জানতে পারেন। হাওড়ার বাগনান, শ্যামপুর ইত্যাদি এলাকার বাসিন্দারা ভূমিকম্প টের পান। বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। হাওড়ার বাগনানের বেড়াবেড়িয়া গ্রামের অশোক দাশগুপ্ত বলেন, “হঠাৎ দেখি, পুকুরের জল অস্বাভাবিক ভাবে দুলছে। এটা দেখেই আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল সুনামির কথা।”
শ্যামপুরের মশাল গ্রামের বাসিন্দা অরূপ মাঝি বলেন, “আমাদের কৃষি সমবায় ব্যাঙ্কে বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে বাইরে এসে দেখি, গ্রামের পুকুরগুলিকে ঘিরে ভিড়। পুকুরের জল অস্বাভাবিক ভাবে পাড়ে ধাক্কা মারছে। পরে টেলিভিশনে দেখি ভূমিকম্প হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.