কুকুরদের মুখ থেকে একটি চিতল হরিণকে উদ্ধার করেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না বাসিন্দারা। পাকস্থলীর গভীর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় বুধবার সকালে সাঁতুড়ির বিট অফিসে ওই চিতল হরিণটি মারা যায়। বিট অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাস বলেন, “কুকুরদের কামড়ে হরিণটির দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। ২৮টি সেলাই করতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওকে বাঁচানো গেল না।” তিনি জানান, দেড়-দু’বছরের ওই মহিলা চিতল হরিণটির ওজন ১৪ কিলোগ্রাম। সাঁতুড়ির ব্লক প্রাণী চিকিৎসক মানস মাণ্ডি বলেন, “কুকুরগুলির কামড়ে হরিণটির পাকস্থলীতে গভীর ক্ষত হয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই হরিণটি মারা গেল।”.
সাঁতুড়ি ব্লকের দণ্ডহিত পাহাড়ে প্রায় শতাধিক হরিণ রয়েছে। খাবার ও জলের সন্ধানে পাহাড়ের জঙ্গল থেকে মাঝে মধ্যেই হরিণের দল লোকালয়ে নেমে আসে। মঙ্গলবার সকালে সেই রকমই একটি হরিণ গ্রামের পুকুরে জল খেতে এসেছিল। সেই সময়েই একপাল কুকুর এই হরিণটিকে ঘিরে ধরে হামলা চালায়। আগেও এই এলাকায় কুকুরের হামলায় লোকালয়ে চলে আসা হরিণের মৃত্যু হয়েছে।.আবার কুকুরের পালের মধ্যে থেকে হরিণকে উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা বাঁচিয়েছেন--এমন ঘটনাও ঘটেছে। |
স্থানীয় ও বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে গ্রামের প্রান্তে পুকুরে জল খেতে এসেছিল ওই হরিণটি। তখন ওই পুকুরে দৈনন্দিন কাজে গিয়েছিলেন গ্রামের মহিলারা। কুকুরের পাল হরিণটিকে ঘিরে হামলা করেছে দেখে ওই মহিলারা কুকুরগুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কুকুরগুলি হরিণটিকে না ছাড়ায় মহিলারা গ্রামের পুরুষদের.ডেকে আনেন। লাঠি হাতে দনা দশেক পুরুষ পুকুর পাড়ে দৌড়ে আসেন। তত ক্ষণে কুকুরগুলি হরিণটির শরীরে কামড় দিয়েছে। হরিড়টিকে উদ্ধার করতে যাওয়া ধনঞ্জয় মাল, শ্রীদাম নন্দী, ভজহরি দাসেরা বলেন, “কোনওরকমে অতগুলো কুকুরের মুখ থেকে হরিণটিকে আমরা উদ্ধার করি। কিন্তু ওদের কামড়ে হরিণটির শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্ত ঝরছিল। বন দফতরকে খবর পাঠিয়ে আমরাই হরিণটির প্রাথমিক শুশ্রষা করি।”
সাঁতুড়ির বিট অফিসার বলেন, “বাসিন্দাদের কাছ থেকে হরিণটিকে নিয়ে এসে রামচন্দ্রপুর প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। হরিণটির সারা দেহে ২৮টি সেলাই করা হয়। বিট অফিসে রেখে পরিচর্যা করা হয়। কিন্তু রাতের দিকে হরিণটি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সকালে মারা যায়।” তিনি জানান, হরিণটির দেহের ময়ানতদন্ত করে দাহ করা হয়। হরিণটি মারা যাওয়ায় মন খারাপ দণ্ডহিত গ্রামের বাসিন্দাদের। হরিণের পাল খাবারের সন্ধানে এসে খেতের সব্জী নষ্ট করলেও বাসিন্দারা হরিণগুলিকে রক্ষা করেন। তাঁরা বলেন, “এর আগেও কয়েকটি হরিণ আমরা কুকুরের হামলা থেকে রক্ষা করেছি। এ বারও ভেবেছিলাম হরিণটাকে বাঁচানো যাবে। কিন্তু হরিণটি মারা হিয়েছে শুনে আমাদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।” রঘুনাথপুরের রেঞ্জার সোমনাথ চৌধুরী বলেন “দণ্ডহিত গ্রামের বাসিন্দারা হরিণগুলিকে রক্ষা করেন। হরিণগুলি যাতে লোকালয়ে না আসে সে জন্য.আমরা পাহাড়ের মধ্যেই খাবার ও জলের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি।” |