মল্লিকঘাট ফুলবাজারের পচা, অবিক্রিত ফুল থেকে এ বার তৈরি করা হবে জৈব সার। রোজই দিনের শেষে ওই বাজারের প্রচুর ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গিয়ে জমা হয় আবর্জনার স্তূপে। সেগুলিই এ বার কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু হয়ে যাবে। মল্লিকঘাট ফুলবাজারের কাছে গঙ্গার ধারে তৈরি করা হবে পাঁচটি পিট। তাতেই ফেলা হবে সমস্ত জঞ্জাল। সেখান থেকে তৈরি হবে জৈব সার। চাষিদের কাছে যা সস্তায় বিক্রি করা হবে।”
ওই ফুলবাজারে রোজ ছয় টন মতো বর্জ্য তৈরি হয়। প্রতি দিন তা নিয়ে যায় পুরসভার ছ’টি গাড়ি। এই বর্জ্য পরিষ্কার করতে প্রতি মাসে খরচ হয়ে যায় প্রায় এক লক্ষ টাকা। পুজোর সময়ে বা কোনও উৎসবের মরসুমে বর্জ্যের পরিমাণ আরও বেশি থাকে। অনেক সময়েই ঠিক মতো পরিষ্কার করা না হওয়ায় তা গিয়ে মেশে গঙ্গায়। মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র বলেন, “এর ফলে যেমন খরচ বাড়ে, সে রকম আবার গঙ্গার দূষণও হয়। এই বর্জ্য দিয়ে সার তৈরি হলে চাষিরা উপকৃত হবেন। ওই সার জমির উর্বরতার ক্ষেত্রেও খুব উপযোগী হবে।”
৩৪০০ বর্গমিটারের উপরে তৈরি এই ফুলবাজারে রয়েছে প্রায় ২৫০টি দোকান। এ ছাড়াও প্রতি দিন গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ রোজ ডালা নিয়ে ফুল বিক্রি করতে আসেন এখানে। ফলে প্রতি দিনই বাজারে জমতে থাকে অবিক্রিত, পচে যাওয়া ফুল, ফুলের ডাঁটি, পাতা ইত্যাদি। প্রতি দিন ঠিক মতো পরিষ্কার না-হওয়ায় অনেক সময়ে দুর্গন্ধও ছড়ায়। ফুলবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের মতে, জঞ্জাল থেকে জৈব সার তৈরি হলে চাষিরাই যেহেতু উপকৃত হবেন, তাই বাজার পরিষ্কার করে সেই আবর্জনা পিটে পৌঁছে দেওয়ায় তাগিদও থাকবে তাঁদের। এক ফুলচাষি জানালেন, পচে যাওয়া রজনীগন্ধার স্তূপ জমে ওঠে প্রায়ই। বিশেষ করে উৎসবের সময়ে এই অবস্থাটা চরমে ওঠে। পুরসভার গাড়ি না এলে জঞ্জালের স্তূপ আরও বাড়ে। তখন তাঁদেরও যেমন ব্যবসায় অসুবিধে হয়, ক্রেতারাও তেমনই বিরক্ত হন।
উদ্যান পালন বিভাগ সূত্রের খবর, গঙ্গার ধারে ওই পাঁচটি পিটে জৈব সার তৈরি করে নৌকার মাধ্যমে তা পাঠানো হবে কোনও গুদামে। সেখানে প্যাকেজিংয়ের পরে তা বিক্রি করা হবে চাষিদের কাছে। উদ্যান পালন বিভাগের আধিকারিক শিবাজি রায় বলেন, “যে সার উৎপাদন হবে, তা খুবই উন্নত মানের। এই সার প্রয়োগে ফুল উৎপাদন বেশি হবে।” সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “বাজার থেকে জৈব সার কিনতে গেলে অনেক খরচ হয়। উদ্যান পালন বিভাগের মাধ্যমে এই সার চাষিরা পেলে এক দিকে যেমন তাঁদের খরচ কম হবে, সে রকম উন্নত মানের সারও পাবেন তাঁরা।” |