রাজ্যের গন্ডারদের নিয়ে সমস্যার শেষ নেই অসম বন দফতরের। চোরাশিকারিদের হাত থেকে তাদের বাঁচানো সমস্যার একটি দিক। অন্য দিকে আছে গন্ডারের গোঁ, বন ছেড়ে এ দিক ও দিক চলে যাওয়া, নিজেদের মধ্যে গুঁতোগুঁতি এবং মেজাজ খারাপ থাকলে বনরক্ষী বা সামনে আসা মানুষকে তেড়ে গিয়ে আঘাত করা। গন্ডারের হামলায় সম্প্রতি কয়েকজনের প্রাণ গিয়েছে। এ রকম ক্ষেত্রে খ্যাপা গন্ডারকে ঠান্ডা করতে প্রয়োগ করতে হয় ঘুমের ওষুধ। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বিদেশ থেকে সেই ওষুধ আনতে হয়। আপাতত অসম বন দফতরের ভাঁড়ারে সেই ওষুধ না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে ওড়িশার নন্দন কানন থেকে তা আনা হচ্ছে।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ জানান, হাতি থেকে বাঘ, চিতাবাঘকে অবশ করার যে সব ওষুধ আছে তা সবই বিদেশি হলেও ভারতে পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা গন্ডারের ওষুধ নিয়ে। গন্ডারকে ঘুম পাড়াতে পারে একমাত্র এটরফিন হাইড্রোক্লোরাইড বা এম ৯৯। এই ওষুধ সারা বিশ্বে এক মাত্র বানায় দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংস্থা। আর তা আনাও বিরাট ঝামেলার।
চিড়িয়াখানার চিকিৎসক এম এল স্মিথের কাছে জানা গেল ঝামেলাটি কী রকম। তিনি জানান, বিশ্বের প্রায় সব দেশই ‘এম ৯৯’কে সর্বাধিক বিপজ্জনক মাদক ও বিষের তালিকায় রাখে। রাসায়নিক চরিত্র অনুযায়ী মরফিন গোত্রের হলেও ‘এম ৯৯’ মরফিন অপেক্ষা হাজার থেকে ৮০ হাজার গুণ শক্তিশালী। এই ওষুধ সরাসরি চামড়ায় লাগানোও নিষেধ। সরকারের তরফে আগাম আইনি বরাত পাওয়ার পরেই ওষুধটি সরবরাহ করা হয়। একসঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ওষুধ বিক্রিও করা হয় না। ‘এম ৯৯’ মাত্র এক বছর কার্যক্ষম থাকে। তাই, বেশি পরিমাণ ওষুধ মজুত রেখেও লাভ নেই। ‘এম ৯৯’ ব্যবহারের সময়, জ্ঞান ফেরানোর ওষুধ হিসাবে ‘এম ৫০৫০’ বা ওই জাতীয় কোনও ওষুধও সঙ্গে রাখতে হয়। সেটিও একই সংস্থা বা বিদেশি কোনও সংস্থার তৈরি। ফলে, সুলভ নয়। ‘এম ৯৯’ ক্রয় করার জন্য প্রথমে বন দফতর রাজ্য সরকারকে জানায়। রাজ্য জানায় কেন্দ্রকে। কেন্দ্রের তরফে বিচার বিবেচনার পরে আন্তর্জাতিক মাদক আইন সংক্রান্ত নিয়মের জটিলতা কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এটরফিন ভারতে আসে। অতঃপর , রাজ্যের হাত ঘুরে নির্দিষ্ট অরণ্য কর্তৃপক্ষের হাতে ওষুধ পৌঁছয়।
এক বনকর্তার হিসাবে, ‘এম ৯৯’ বরাত দেওয়া থেকে শুরু করে হাতে আসা অবধি মাস ছয়েকের ধাক্কা। ততদিনে ওষুধের কার্যকালের মেয়াদ অর্ধেক শেষ। অথচ অসমে গন্ডার প্রতিস্থাপন, গন্ডারের লোকালয়ে হানা দেওয়া, জাতীয় উদ্যান ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসার ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একটি গন্ডারকে ঘুম পাড়াতে ৩ থেকে ৫ মিলিগ্রামের ‘এম ৯৯’ ডোজ ব্যবহার করা হয়। এ দিকে, এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অন্যত্র না থাকায়, কেবল গুয়াহাটি চিড়িয়াখানাতেই ‘এম ৯৯’ রাখা হয়। তাই, উজানি অসমে গন্ডার বের হলেও, গুয়াহাটি থেকে এটরফিন গেলে তবে তাকে ঘুম পাড়ানোর কাজ শুরু করা সম্ভব।
চাঁদ জানান, রাজ্যে, ‘এম ৯৯’-এর ভাঁড়ায় প্রায় শেষের মুখে। এ দিকে, লাল ফিতের ফাঁস পেরিয়ে কবে, ওষুধ আসবে জানা নেই। তাই, গোটা দেশে ‘এম ৯৯’-এর সন্ধানে বার্তা গিয়েছিল। ওড়িশার নন্দন কানন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কাছে উদ্বৃত্ত ‘এম ৯৯’ রয়েছে। তাই, নগদ অর্থ গুণে দিয়ে নন্দন কানন থেকে অসম চিড়িয়াখানা ‘এম ৯৯’ কিনছে। চাঁদ জানান, মোট এটরফিন-এর ২০টি ভায়েল কেনা হবে। |