সম্পাদকীয় ২...
জবাবদিহির দায়
চ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার উত্তরপত্রের মূল্যায়নে ত্রুটি রহিয়া গিয়াছে, এই অভিযোগে এক ছাত্রী পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হইয়াছিল। আদালত কেবল পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশই দেয় নাই, ইহাও বলিয়াছে যে ছাত্রীটির উপস্থিতিতে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদকে পুনরায় খাতা দেখিতে হইবে, যাহাতে তাহার সকল সংশয়ের নিরসন তখনই যায়। ইহাতে পরীক্ষার্থীর উত্তরের পুনর্মূল্যায়ন কেবলমাত্র একটি নিয়মরক্ষায় পর্যবসিত হইবে, এই আশঙ্কা আর রহিল না। যত দূর সম্ভব স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হইল, সেই সঙ্গে পরীক্ষার্থীর প্রতি কোনও অন্যায় না হয়, সে ব্যবস্থাও হইল। বিশেষত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলির ক্ষেত্রে ভ্রান্ত মূল্যায়নের ফলে যে অন্যায় হইয়া থাকে, তাহার প্রতিকার করিবার জন্য ইহার চাইতে কার্যকরী উপায় আর নাই। উপরন্তু, পরীক্ষার্থীর উপস্থিতিতে খাতা দেখিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে জানিলে পরীক্ষকরা অনেক সতর্ক হইবেন, ইহাও প্রত্যাশা।
এই রায় পরীক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে দেওয়া হইলেও, ইহার অন্তর্গত দর্শনটি ব্যাপক। পরীক্ষার্থীর নিকট পরীক্ষক, নাগরিকের নিকট সরকারি কর্মী, গ্রাহকের নিকট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা কিংবা ব্যক্তি, সকলেই দায়বদ্ধ। যাহা পাইবার কথা, তাহা খাতার নম্বর হউক, অথবা প্রাপ্য বস্তু বা পরিষেবাই হউক, সে বিষয়ে অভিযোগ করিলে যথাযথ তথ্য দিতে হইবে, কারণ দর্শাইতে হইবে, অন্যায় হইয়া থাকিলে প্রতিকার করিতে হইবে, ক্ষতিপূরণও দিতে হইতে পারে। এইগুলি নিশ্চিত করিবার নানা প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিও রহিয়াছে, কিন্তু প্রায়ই সেগুলি নামমাত্র পালন করা হয়। যথার্থ প্রতিকারের কোনও আয়োজন করা হয় না। এই কারণে দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রণীত ‘তথ্যের অধিকার’ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রহসন হইয়া দাঁড়াইতেছে। বহু অপেক্ষার পর পুলিশ, সরকারি দফতর কিংবা পঞ্চায়েত হইতে যে চিঠিগুলি আবেদনকারীরা পাইয়া থাকেন, সেগুলি নিতান্ত অন্তঃসারশূন্য, তাহার দ্বারা কোনও সংশয়ের নিরসন ঘটে না। অন্যায়ের কোনও প্রতিকারও ঘটে না।
হাইকোর্টের এই রায়টি প্রশাসনের জন্য পথ প্রদর্শনের কাজ করিবে। বৈষম্য কিংবা অন্যায়ের প্রতিকারের প্রক্রিয়াতে অভিযোগকারীর উপস্থিতিকে মানিয়া লইতে হইবে, তাহার প্রশ্নগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হইবে। ইহাতে কর্তৃপক্ষের মর্যাদাবৃদ্ধিই হইবে, তাহার কর্তৃত্বকে খর্ব করা হইবে না। কারণ স্বচ্ছতার মূল্যই সর্বাধিক। যাঁহারা স্বমূল্যায়নের সম্ভাবনায় ক্ষুব্ধ হইয়া ওঠেন না, বরং আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাঁহারাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কর্মী। শিক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যাঁহারা উত্তম শিক্ষক, তাঁহারা ছাত্রদের প্রশ্ন করিতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু যাঁহারা শিক্ষক হিসাবে দুর্বল, তাঁহারা ছাত্রের প্রশ্নকে শিক্ষকের মর্যাদায় আঘাত বলিয়া গণ্য করেন, এবং ছাত্রদের দুঃসাহস দেখিয়া অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া ওঠেন। তেমনই, উত্তম সংস্থাগুলি গ্রাহকদের অভিযোগগুলিকে যত্নের সহিত নথিভুক্ত করিয়া রাখে, যাহাতে পরিষেবার কোন দিকগুলি দুর্বল তাহা স্পষ্ট হইয়া ওঠে এবং তাহার সংশোধন করা যায়। দুঃখের বিষয়, এইরূপ তৎপরতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলিতেই পরিলক্ষিত হয়। সরকারি কর্মীরা নিজেদের মূল্যায়নের ঊর্ধ্বে বলিয়া মনে করেন। আদালতের রায় মনে করাইয়া দিল, পদ বা ক্ষমতা, কোনও কিছুই পরিষেবাদাতাকে মূল্যায়নের ঊর্ধ্বে রাখিতে পারে না। যাহার প্রতি সে দায়বদ্ধ, তাহার কথা শুনিতেই হইবে, উত্তরও দিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.