সম্পাদকীয় ১...
নাটকীয় অপসারণ
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর সদস্য এবং চংকিঙ-এর পার্টি-প্রধান বো জি-লাই দলের দুই শীর্ষ সংগঠন হইতেই অপসারিত হইয়াছেন। তাঁহার স্ত্রী গু-কাইলাই এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ীকে খুন করার দায়ে গ্রেফতার হইয়াছেন। এই দুই ঘটনাই চিনের অভ্যন্তরে ও বাহিরে শোরগোল ফেলিয়া দিয়াছে। কারণ বো জি-লাই দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। চিন যে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির অনুশীলন করিয়া থাকে, তাহার বিকল্পে একটি জনমুখী অর্থনীতির মডেল তিনি চংকিঙে অনুসরণ করিতে শুরু করেন। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করার উপর জোর দিয়া এবং সংগঠিত অপরাধচক্র ভাঙিতে কঠোর দমননীতির প্রয়োগ করিয়া তিনি রীতিমত জনপ্রিয়তাও অর্জন করিয়াছিলেন। চলতি বছরের শেষে হু জিন তাও-এর অবসরগ্রহণের পর দেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ কর্ণধার হিসাবে তাঁহার নামও দেশবিদেশের রাজনৈতিক মহলে অল্পবিস্তর আলোচিত হইতেছিল। তাঁহার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সেই আলোচনায় ইন্ধনও জোগায়। এমন এক বরিষ্ঠ নেতার সর্ব স্তরের নেতৃপদ হইতে আকস্মিক অপসারণ তাই নানা জল্পনার জন্ম দিয়াছে।
জল্পনা এত দূর গড়াইয়াছে যে, চিনা সেনাবাহিনীর মুখপত্রেও বর্তমান শীর্ষ নেতা হু জিন তাও-এর সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমাবেশিত হওয়ার এবং তাঁহার নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করার অঙ্গীকার উচ্চারিত। তবে কি চিনা নেতৃত্ব অপসারিত বো জি-লাইয়ের তরফে বিদ্রোহের আশঙ্কাও করিতেছেন? অন্যথায় আগ বাড়াইয়া এ ভাবে সেনাবাহিনীকে অসামরিক কর্তৃপক্ষের প্রতি বশ্যতার শপথ ঘোষণা করিতে হইবে কেন? প্রসঙ্গত, অনেকেরই ১৯৮৯ সালের নাটকীয় পটপরিবর্তনের কথা মনে পড়িবে। সে সময় দেশময় গণতন্ত্রকামী ছাত্রযুবদের আন্দোলন রাজধানী বেজিংয়ের তিয়েনানমেন স্কোয়ারে কেন্দ্রীভূত হইলে নৃশংস দমননীতির সাহায্যে বহু নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীর উপর ট্যাংক ও সাঁজোয়া বাহিনীর বর্বর হত্যালীলার পর আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল দলপতি ঝাও জিয়াংকে অপসারিত করিয়া কট্টরপন্থীরা অপেক্ষাকৃত অপরিচিত জিয়াং জেমিনকে শীর্ষ ক্ষমতায় মোতায়েন করেন। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সংস্কারবাদী গোষ্ঠীও কট্টরপন্থী। তাঁহাদের আশঙ্কা মাও জে দং জমানার মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকার ফিরাইয়া আনার চেষ্টা করিতেছেন বো জি-লাই। এমনকী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মতো একটা উতরোল রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও প্রশাসনিক স্বৈরাচারের আশঙ্কাও তাঁহাদের আছে। দেশের স্থিতি ও অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির স্বার্থে এমন কোনও ঝুঁকি লইতে তাঁহারা প্রস্তুত নন। তাই বো জি-লাইকে অপসারিত হইতেই হইত।
কোনও নেতা যদি একই সঙ্গে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার অধিকারী হন, উপরন্তু দলের লাইন-বিরুদ্ধ আচরণ করেন, তবে দলীয় আমলাতন্ত্র তাঁহাকে সহ্য করিবে, কমিউনিস্ট পার্টিতে তেমন গণতন্ত্র কখনও ছিল না। মুখে ‘দুই লাইনের সংগ্রাম’, ‘সংগ্রামের মধ্য দিয়া ঐক্য’ ইত্যাদি আপ্তবাক্য আওড়ানো হইলেও বাস্তবে ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’-এর প্রবক্তা কমিউনিস্টরা কোনও কালেই ভিন্ন স্বরের প্রতি সহিষ্ণু নন, সমস্বরই তাঁহাদের অভীষ্ট। বো জি-লাই দলের শাসক গোষ্ঠীতে শামিল হইয়াও ভিন্নতর পথের হদিশ করিতেছিলেন। দলের মধ্যে তাঁহার প্রভাব ও জনপ্রিয়তা যে ভাবে উত্তরোত্তর বাড়িতেছিল, তাহাতে শীর্ষ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব, সেনা-কমান্ডার (মিলিটারি কমিশনের সদস্যপদের সুবাদে শীর্ষ রাজনীতিকরাই যে পদে আসীন) ও আঞ্চলিক প্রশাসকদের কায়েমি স্বার্থ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইতে পারিত। সেই সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করিতে দল তাহার অন্যতম প্রধান সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিমান রাজনীতিককে ছাঁটিয়া ফেলিল। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত দেশে ইহা কোনও অভিনব ঘটনা নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.