জমি-বিরোধের জেরে দুমকার রানিশ্বরপুর ব্লকের পারপলসা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের উপরে পুলিশের গুলি চালনার প্রতিবাদে আজ পথে নামে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। আদিবাসীদের উপর পুলিশের গুলি চালনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন এলাকার জেএমএম বিধায়ক নলিন সোরেন। এই দাবির সমর্থনে রানিশ্বর ব্লকে সকাল থেকে পথ অবরোধ শুরু করে জেএমএম কর্মীরা। শাসক জোটে জেএমএম-এর সঙ্গী বিজেপি-ও তাদের সুরে সুর মিলিয়ে পুলিশের গুলি চালনার নিন্দায় সরব হয়েছে। আজ ঘটনাস্থল ঘুরে এসে পুলিশের গুলি চালনার তদন্তের দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শিবলাল ঘোষ।
আজ সকাল আটটা থেকে রানিশ্বরপুর ব্লকের রঘুনাথপুর মোড়ে দুমকা-সিউড়ি রোড অবরোধ করে জেএমএম। পুলিশের গুলিতে আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবিতে টানা ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরোধ চলে। বেলা পৌনে তিনটা নাগাদ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় অবরোধ ওঠে।
দুমকা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রানিশ্বর ব্লকের পারপলসা গ্রামের ২৫ বিঘা জমি নিয়ে আদিবাসীদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অনেক দিন ধরেই বিরোধ চলছিল। মহকুমা শাসক সঞ্জয় সিংহ জানান, গত ২ এপ্রিল পারপলসা গ্রামের বাসিন্দা গেলি টুডু জেলার পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানান, তাঁর ২৫ বিঘা কৃষি জমি দখল করে রেখেছে গ্রামেরই জনৈক জয়ধন হেমব্রম। গেলি টুডুর বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে জমির রেকর্ড দেখা হয়। সরকারি নথি ঘেঁটে রেকর্ডে গেলি টুডুর নামই পাওয়া যায়। মহকুমা শাসক বলেন, “ছোটনাগপুর টেনেন্সি আইনের মতোই আদিবাসীদের জমির অধিকার সুরক্ষার জন্যও রয়েছে সাঁওতাল পরগনা টেনেন্সি আইন। ওই আইনের ৪২ নম্বর ধারা অনুযায়ী জয়ধন হেমব্রমকে ওই ২৫ বিঘা জমির দখল ছাড়ার জন্য নোটিস পাঠানো হয়। |
পাশাপাশি বিষয়টি জানানো হয় এলাকার আদিবাসী সমাজের মাথাদের। মহকুমা শাসক জানান, আদিবাসী সমাজের সর্বোচ্চ নিজস্ব গ্রামীণ বিচার ব্যবস্থার বৈঠক ডাকা হয়েছিল গত কাল বিকেলে। আদিবাসী সমাজের গ্রামীণ ওই বিচার সভায় দুই পক্ষকেই ডাকা হয়। কিন্তু বৈঠকে জয়ধন হেমব্রম এবং তাঁর পরিবারের কেউই আসেননি। গোলমালের সূত্রপাত সেখানেই। দুমকা প্রশাসনের কর্তারা জানান, এরই মধ্যে পারপালসা গ্রামে কে বা কারা রটিয়ে দেয়, পুলিশ জয়ধন হেমব্রমকে মেরেধরে গ্রাম ছাড়া করে দিয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে তার ঘরবাড়িও। সঞ্জয়বাবু বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধকে ঘিরে উত্তেজনা থাকায় ওই গ্রামে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। আদিবাসী সমাজের বিচার সভায় জয়ধন হেমব্রম না-আসায় পুলিশ ওকে মেরে তাড়িয়েছে বলে গুজব রটে। ওই গুজব শুনেই গ্রামের বেশ কিছু মানুষ লাঠি-টাঙ্গি-তির-ধনুক নিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হয়। পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। লাঠি চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না-আসায় মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ পর পর ন’টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। তাতেও কাজ না-হলে পুলিশকে গুলি ছুড়তে হয় বলে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।
পুলিশ সুপার হেমন্ত টোপ্পো জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে ৬ রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয়েছে। গুলিতে জখম হয়েছেন দুজন মহিলা-সহ চারজন গ্রামবাসী। গ্রামবাসীদের আক্রমণে একাধিক অফিসার-সহ কমবেশি জখম হয়েছেন অন্তত ১৩ জন পুলিশ কর্মী। এলাকার অবস্থা আজও থমথমে।দুমকা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে আহতদের মধ্যে দুজনকে প্রতিবেশী রাজ্যের বীরভূমের সিউড়ি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকি দুজনকে পাঠানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। তাদের চিকিৎসার খরচ প্রশাসনই বহন করবে। |