বৈধ-অবৈধ বিতর্কে না গিয়ে মানবিক এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবদমান দুই ‘স্ত্রী’র উভয়েরই আর্থিক সুরাহার পক্ষে মত দিল হাইকোর্ট। ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’কে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ মৃত ‘স্বামী’র চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে ‘প্রথম স্ত্রী’ যাতে ওই ব্যক্তির অবসরকালীন সমস্ত প্রাপ্য পান, তার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদকে সক্রিয় হতে বলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী।
২০০৫ সালের ২০ জুলাই কর্মরত অবস্থায় মারা যান রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মী সাধনচন্দ্র দেব। তাঁর স্ত্রীর নাম জয়ন্তী দেব। জয়ন্তীদেবীর একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পাশাপাশি সাধনবাবুর আরও একটি ‘সংসার’ ছিল। তাঁর ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’র নাম কল্যাণী। তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। সাধনবাবু জীবিত অবস্থায় দু’পক্ষকেই সাধ্য মতো দেখভাল করতেন। সাধনবাবুর কর্মক্ষেত্র রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে তাঁর প্রাপ্য অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে জয়ন্তীদেবীর নাম মনোনীত (নমিনি) করা রয়েছে। পর্ষদ তাঁকে সাধনবাবুর অবসরকালীন প্রাপ্যের কিছু টাকা দিয়েওছে। ‘দ্বিতীয়া স্ত্রী’ কল্যাণী এই খবর পাওয়ার পরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁর দাবি, তিনিই সাধনবাবুর স্ত্রী।
কল্যাণীদেবীর আইনজীবী পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, “কল্যাণীদেবী যে সাধনবাবুর বৈধ স্ত্রী, তার প্রমাণ রয়েছে।” অন্য দিকে জয়ন্তী দেবীর আইনজীবী রামকৃষ্ণ রায় বলেন, “হিন্দুদের প্রথম বিয়েই বৈধ। বিবাহবিচ্ছেদ না হলে দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না।”
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী এ দিন বলেন, বৈধ-অবৈধের আইনি জট ছাড়ানো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। দু’জনেরই দাবির সারবত্তা রয়েছে। কিন্তুবর্তমানে এই দুই মহিলারই আর্থিক অবস্থার সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। অবৈধ হলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর দাবিকে মানবিক দিক থেকে খারিজ করে দেওয়া যায় না। বিচারপতি তাঁর নির্দেশে বলেন, কল্যাণী দেবীর এখন মধ্য চল্লিশ। তাই তিনি ১৫-১৬ বছর চাকরি করার সুযোগ পেতে পারেন। সুতরাং আবেদনকারীকে হাইকোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে পর্ষদের কাছে চাকরির আবেদন করতে বলা হচ্ছে। চার সপ্তাহের মধ্যে পর্ষদকে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য দিকে জয়ন্তীদেবীর গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য, বিচারপতি চান, প্রয়াত সাধনবাবুর অবসরকালীন প্রাপ্য ও পেনশন দেওয়া হোক জয়ন্তীদেবীকে। ওই টাকা ব্যাঙ্কে রাখলে মাসিক সুদ এবং প্রাপ্য পেনশনের টাকায় জয়ন্তীদেবী চালিয়ে নিতে পারবেন। প্রাপ্য টাকার পরিমাণ এবং তা মেটানোর প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিদ্যুৎ পর্ষদকে এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলেছেন বিচারপতি। পরবর্তী শুনানির দিন তিনি চূড়ান্ত রায় দেবেন। সম্প্রতি একাধিক মামলায় হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিবাহিত স্ত্রীর পাশাপাশি লিভ-ইন সঙ্গিনী বা বিবাহের সমতুল সম্পর্কে জড়িত নারীর জন্যও ভরণপোষণের অধিকার স্বীকার করেছে। |