নামী রেস্তোরাঁয় বসে বাঙালি ভোজ এখন ‘ট্রেন্ড’। নববর্ষ উপলক্ষে সে খাবারের পরিবেশনায় নতুনত্ব আনতে শহরের রেস্তোরাঁ মহলে চলছে নানা রসনায় মেনুর প্যাকেজিং। কোথাও একই সঙ্গে থাকছে দুই বাংলার নানা রান্না, কোথাও ‘বৈশাখী’ উৎসবকে মাথায় রেখে ঘটছে বাঙালি আর পঞ্জাবি খাদ্য সংস্কৃতির মেলবন্ধন।
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাদে-গন্ধে নববর্ষে উদ্যাপন করতে যাওয়া যায় বাইপাস অথবা এলগিন রোডের ‘ওহ্ ক্যালকাটা’য়। চট্টগ্রামের চিংড়ির শিক, ময়মনসিংহের মুরগি ভাজা, কাঁচকলা মাংসের টিকিয়া, মেঘনা ইলিশের ধনে ঝোলের মতো নানা জায়গার নানা পদে জমজমাট হয়ে উঠতে পারে বাঙালিয়ানার এই উদ্যাপন।
দুই বাংলার বিশিষ্ট রসনা সম্ভার চেখে দেখার বিশেষ আয়োজন থাকছে দ্য পার্কের ‘স্যাফরন’-এও। ঠাকুরবাড়ির বিশেষ কষা মুরগি থেকে শুরু করে চিংড়ির বাটি চচ্চড়ি, বরিশালী আলুরদমের মতো নানা পদ রাঁধার জোর প্রস্ততিতে ব্যস্ত সেখানকার বিশেষজ্ঞ শেফরা। চলে যাওয়া যায় তাজ বেঙ্গলের ‘সোনারগাঁও’-তে। ঠান্ডা লেবু পাতার ঘোলে শুরু করে ঢাকাই মাংসের কালিয়া, ডালের কচুরি, দুধ রসগোল্লা, ভাপা মিষ্টি দইয়ের সাবেক বাঙালি আহার সারা যাবে সেখানে। |
বাঙালিয়ানা উদ্যাপনে নতুন বছরের বিশেষ ভোজ জমতে পারে ক্রোম হোটেলের ‘খানাসূত্র’-তেও। বছরের এই বিশেষ দিনটায় রোজের উত্তর ভারতীয় মেনু বাদ দিয়ে শুধু বাছাই করা কিছু বাঙালি পদ রাখা হচ্ছে সেখানে। ভাপা ইলিশ, চিংড়ির মালাইকারি, কষা মাংসের সাবেক স্বাদে সেখানে হতে পারে বর্ষবরণ।
আবার ছানার ডালনা, ধোকা ভাজা, কুমরো ফুলের বড়া, পটোল পোস্ত, বাটি চিংড়ি, মালপোয়ার ঘরোয়া স্বাদে বছর শুরু করা যায় দক্ষিণ কলকাতার ফর্চুন সিলেক্ট লাউডনের নতুন রেস্তোরাঁ ‘জোডিয়াক’-এ। বাঙালি বাড়ির সাধারণ রান্নাগুলোকে উৎসবের ভোজে নতুন ভাবে পরিবেশন করাই তাদের এ বারের আয়োজনের বিশেষত্ব।
বৈশাখকে বরণ করতে এ সময়ে উৎসবে মাতেন পঞ্জাবিরাও। নববর্ষের বাঙালি ভোজের পাশাপাশি তাই ‘বৈশাখী’ উদ্যাপনে কিছু জায়গায় থাকছে রকমারি পঞ্জাবি রান্নারও আয়োজন। হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালের ‘কলস’-এ যেমন একই সঙ্গে পাওয়া যাবে দু’জায়গার রান্না। রকমারি বাঙালি পদের মাঝে স্বাদ বদল করে নিতে চেখে দেখা যায় পঞ্চ নদের রাজ্যের কোনও বিশেষ রসনা। অমৃতসরি মছলিই হোক বা মুর্গ মাখানি অথবা গোস্ত বেলিরাম, তা মোটেই তাল কাটবে না চিংড়ি মালাইকারি-পাবদা মাছের ঝাল-কাঁচকলার কোফতার আহারের মাঝে এসে। বৈচিত্রটুকু বরং বাড়িয়েই তুলতে পারে এই বিশেষ দিনের ভোজের আনন্দ।
সম্পূর্ণ পঞ্জাবি ব্যঞ্জনে বর্ষবরণ করতে আবার চলে যাওয় যায় পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ ‘পঞ্জাব’-এ। সাবেক পঞ্জাবি খানার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ শেফের হাতে তৈরি নানা নতুন ধরনের রেসিপিও সেখানকার বিশেষত্ব। লাহুরি পনির টিক্কা থেকে মুরগির মাংস আর পালং শাকের মিলমিশে তৈরি মুর্গ কস্তুরী সাগওয়ালা, মিস্সি রোটি থেকে নিভো আঁচে রাঁধা চিংড়ি আর বাসমতি চালের ঝিঙ্গা পোলাও দিয়ে বেশ অন্য ভাবে বরণ করা যায় এ বৈশাখকে।
নববর্ষের কেনাকাটার ফাঁকেও বাঙালি খাবারে চলতে পারে উদ্যাপন। এই মরসুমে কাঁকুড়গাছির প্যান্টালুন্স-এর ফুড কোর্টে ব্যবস্থা থাকছে মুর্শিদাবাদী মুরগি ভাজা, হংসরাজী ডেভিল, চিংড়ির কাটলেটের মতো বেশি কিছু মুখরোচক স্ন্যাক্স।
বছর শুরুর মিষ্টিমুখেও এ বার আনা যায় বৈচিত্রের ছোঁয়া। নববর্ষ উপলক্ষে পান, সবেদা, ডাবের জল আর নারকেল দিয়ে তৈরি নানা নতুন স্বাদে জেলাতো পরিবেশন করবে ‘মামা মিয়া’। উৎসবের শহরকে নব আনন্দে মাতিয়ে তুলতে আইস ক্রিমেও আসছে নতুন স্বাদ। ‘ফ্রুটি ফ্রিজ’-এর যে কোনও দোকানে গিয়ে চেখে দেখা যায় মিষ্টি দই, মিষ্টি পান অথবা ডাব মালাই স্বাদের সে সব আইসক্রিম। |