বাবার কাছে খবর পেয়ে মেয়ের ‘ঝাঁপ’ রুখল মেট্রো
মেট্রোর লাইনে ‘ঝাঁপ’ দিয়ে প্রাণহানির ঘটনা আকছার ঘটে। কিন্তু বুধবার তেমনই একটি আশঙ্কার কথা পরিবারের তরফে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাঁদের ও পুলিশের তৎপরতায় রক্ষা পেল একটি প্রাণ। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখে এবং বিভিন্ন স্টেশনে নজরদারি বাড়িয়ে এক কলেজছাত্রীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল মেট্রো ও পুলিশ।
ওই তরুণীর বাবা জানান, তাঁদের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মফস্সল এলাকায়। তাঁর দুই মেয়ে পড়াশোনার সূত্রে দক্ষিণ কলকাতায় মেসে থাকেন। ব্যক্তিগত একটি সম্পর্কের কারণে বাড়ির সঙ্গে মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে। এ দিন সকালে তিনি কলকাতায় মেয়েকে নিতে আসেন। কথা ছিল, যতীন দাস পার্ক স্টেশনে অপেক্ষা করবে মেয়ে। কিন্তু দমদমে মেট্রোয় ওঠার আগে মেয়ের বন্ধুদের ফোন পান তিনি। বন্ধুরা জানান, ওই তরুণী তাঁদের বলেছেন, “আর দেখা হবে না।”
এ কথা শুনে বিপদের গন্ধ পেয়ে তড়িঘড়ি যতীন দাস পার্ক স্টেশনে পৌঁছন ওই ব্যক্তি। স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে ছোট মেয়ের ছবি নিয়ে দেখান, জানান তাঁর আশঙ্কার কথাও। পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশে কর্মরত এক বন্ধুকেও বিষয়টি জানান তিনি। এর পরেই পুলিশ ও মেট্রোর যৌথ উদ্যোগে সমস্ত স্টেশনে সতর্কবার্তা পৌঁছয়। নজরদারি বাড়িয়ে দেন মেট্রোর নিরাপত্তারক্ষীরাও।
পরিবার সূত্রে বলা হয়, বেলা পৌনে দশটা নাগাদ পুলিশ জানায়, মোবাইল টাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী পাটুলি এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন ওই তরুণী। খবর দেওয়া হয় মেট্রোর অফিসারদের। কবি সুভাষের উদ্দেশে রওনা হন পরিবারের লোকজনও। বেলা দশটা নাগাদ কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে ছাত্রীটিকে পাওয়া যায়।
মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সাধারণ) প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “পাটুলির কথা শোনার পরেই কবি সুভাষ স্টেশনে সতর্কতা পাঠানো হয়। অরুণ মণ্ডল নামে আমাদের এক কর্মী মেয়েটিকে আটকান। পরে তাঁকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।”
মেট্রোকর্তাদের বক্তব্য, লাইনে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এ দিনের ঘটনা তাঁদের কাছে বড় ধরনের সাফল্য। মেট্রো সূত্রের দাবি, এর আগেও লাইনে ঝাঁপ দেওয়া কয়েক জন প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু এ দিনের ঘটনা বিরল।
মেট্রো সূত্রের খবর, লাইনে ঝাঁপ দেওয়ার ফলে প্রায়ই পরিষেবা ব্যাহত হয়। নাকাল হন সাধারণ মানুষ। মেট্রোয় আত্মহত্যা রুখতে নিয়মিত প্রচারও চালানো হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনও আশঙ্কার কথা সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সিকিওরিটি কন্ট্রোলে (০৩৩-২২১৭ ৬৩৭০) জানালে চটজলদি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। সেখানে বসে বিভিন্ন স্টেশনে ক্লোজ্ড সার্কিট টিভির (সিসিটিভি) সাহায্যে নজরদারি চলে। স্টেশনের কর্মীরাও প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের উপরে সিসিটিভি-র মাধ্যমে নজর রাখেন। পাশাপাশি, হতাশ এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত নাগরিকদের সাহায্যের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নম্বরও (০৩৩-২৪৬৩ ৭৪০১/৩২) প্রচার করা হয়। কিন্তু ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে খুব বেশি ফোন আসে না। মেট্রো কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, আত্মহত্যা রুখতে ওই নম্বরের প্রচার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি, মেট্রোকর্তারা বলছেন, কোনও সহযাত্রীর আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীকে জানানো উচিত।
এর বাইরেও কি অন্য কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে মেট্রো?
প্রত্যুষবাবু জানান, মেট্রোর চালকদের স্টেশনে ঢোকার সময়ে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই কোনও ব্যক্তি লাইনে ঝাঁপ দিলেও চালক গাড়ি থামিয়ে তাঁকে বাঁচিয়েছেন। গত সোমবার শ্যামবাজার স্টেশনে এক ব্যক্তি লাইনে ‘লাফ’ দিলেও চালকের তৎপরতায় বেঁচে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও, প্ল্যাটফর্মে হাজির যাত্রীদের উপরে আরপিএফ কর্মীদের এবং ক্লোজড সার্কিট টিভির নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.