|
|
|
|
গাজন উৎসবে মেতেছে ময়ূরেশ্বর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
কারও জিভ বিদ্ধ লোহার ফলায়, কেউ বা শুয়ে রয়েছেন পেরেক বসানো পাটাতনে। এই দৃশ্য দেখে অনেকেরই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। তবুও শিবের গাজন উপলক্ষে ভক্তদের এহেন কলাকৌশল দেখতে প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় জমান ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণগ্রামের রায়পাড়ার শিবতলায়। প্রচলিত আছে শিবের বিয়ে উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র মাসে গাজন উৎসব পালিত হয়। কিন্তু এই গ্রামে ঠিক কবে থেকে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল তা জানেন না গ্রামের প্রবীণেরা। কিন্তু সব বয়সের মানুষ জানেন গ্রামের আসল উৎসব হল এই গাজন। |
|
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
অন্যান্য পুজো-সহ গ্রামে ৪টি দুর্গা পুজো রয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, গাজনের মতো অন্য কোনও উৎসব এমন ভাবে নাড়া দিতে পারে না। তাই আত্মীয়-পরিজন থেকে সকলেই মুখিয়ে থাকেন দক্ষিণগ্রামের গাজন উৎসবের দিকে। মল্লারপুরের সাথী চট্টোপাধ্যায়, স্বান্তনা ধীবররা বলেন, “প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় বাপেরবাড়ি আসা হোক না হোক, গাজনে আসা চাই-ই চাই। এই সময় বাল্য বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়।” একই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন রাতমার তুষার দত্ত, পাহানার সুনীল দাসেরও। তাঁদের কথায়, “ভক্তদের ‘বান ফোঁড়া’ দৃশ্য বড় পৈশাচিক লাগে। কিন্তু এক অদৃশ্য টানে প্রতি বছর এখানে হাজির হই।”
ঢাক-ঢোল কাঁসর-সহ মানুষের সমবেত ধ্বনি কার্যত গর্জনের মতো শোনায়। টানা সাত দিন ধরে দক্ষিণগ্রামের রায়পাড়া সমবেত গর্জনে গাজন হয়ে উঠেছে। কী নেই সেখানে? ভক্তদের ‘বান ফোঁড়া’ থেকে শুরু করে যাত্রা, বাউল, বোলান, সঙ, গ্রামীণ মেলাও রয়েছে। কচিকাঁচারা তাই দিব্যি খুশি। এক হাতে পাঁপড় অন্য হাতে বেলুন, বাঁশি নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী পল্লবী কোনাই, প্রথম শ্রেণির বাসুদেব বাগদিদের কথায়, “দুর্গাপুজো ৪ দিনের, আর গাজন সাত দিন। কোনও শাসন-বারন নেই। তবে ‘বান ফোঁড়া’ দেখে গা শিরশির করে। ভয়ও লাগে।” তাদের প্রশ্ন, ওদের ব্যথা লাগে না?
ব্যথার কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ভক্তরা। কৃষ্ণচন্দ্র কোনাই, শান্তি ধীবররা বলেন, “প্রতি বছর আমরা ‘বান ফোঁড়া’। কিন্তু কোনও ব্যথা টের পাওয়া তো দূরের কথা এক ফোঁটা রক্তও ঝরে না। এই কাজ করার জন্য গঙ্গা স্নান করে শুদ্ধ হয়ে সাত দিন উপোস করে নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়।” প্রধান সেবাইত সন্ন্যাসী বাগদির দাবি, “সবই দেব মহিমা।” ৮৫ বছরের পুষ্পরঞ্জন রায়, ৬৫ বছরের চামেলী মুখোপাধ্যায়রাও বলেন, “দেব মহিমা না হলে কি এত মানুষ প্রতি বছর ছুটে আসেন বাবার কাছে?” |
|
|
|
|
|