সাড়ে সাত বছর পেরিয়ে গেল। সে বার ভূমিকম্পের সময় মনে হয়েছিল ঘরগুলো কেউ যেন ঝাঁকুনি দিয়ে কাঁপাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় যে ভাবে সিঁড়িগুলো দুলছিল তাতে নীচে নেমেও আতঙ্ক কাটেনি। রাস্তায় নেমে এগোব কী, রাস্তায় জায়গায় জায়গায় ফেটে গরম জল উঠে এসে পথ আটকাচ্ছিল। পরে জেনেছিলাম, প্রথম বার আট-নয় মিনিট ধরে কম্পন চলেছিল। কিন্তু তখন সেই সময়টুকু মনে হচ্ছিল শেষই হচ্ছে না। শুধু দুলছি আর দুলছি।
সেই আতঙ্কের কাছে এ দিন দুপুরের কাঁপুনি কিছুই না। দুপুরে সেকেন্ড কয়েকের জন্য চেয়ারটা একটু দুলে ওঠায় বুঝতে পেরেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু এ রকম অল্পস্বল্প কাঁপুনি এখানে বছরে এত বার হয় যে, স্থানীয় লোক তাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। সাড়ে সাত বছর আগের ওই তাণ্ডবই সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে মনে হয়।
সে বারের দিশাহারা অবস্থা মনে করলে আজও কেমন শিরশিরানি লাগে। ভোরবেলায় ভূমিকম্পের পর পর গোটা তিনেক কুড়ি ফুটের মতো উঁচু ঢেউ ফুঁসে উঠে এসে তালগোল পাকিয়ে দিয়েছিল শহরটাকে। মিনিট কুড়ি-পঁচিশে শেষ হয়ে গিয়েছিল সব কিছু। |
আর এ বার ব্যাপারটা ছিল অনেকটাই গতে বাঁধা। বাড়িগুলো এখন ভূমিকম্প-নিরোধী প্রযুক্তিতে তৈরি বলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাটাও কমেছে অনেক। কাঁপুনির পর পরই টিভি আর রেডিও মারফৎ সবাই মোটামুটি জেনে গিয়েছিল, কী হয়েছে। ২০০৪-এর শিক্ষা থেকে অনেক তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রশাসনও। এ দিন পুলিশের গাড়ি যখন সুনামি-সতর্কতার কথা মাইকে বলতে বলতে যাচ্ছিল, ততক্ষণে সবাই মোটামুটি প্রস্তুতই হয়ে গিয়েছিল আরও একটা যুদ্ধের। উপকূলবর্তী নিচু এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু ক্যাম্পবেল বে, কামাডা, হাট বে-র দিকে রওনা হতে শুরুও করে দিয়েছিল অনেকে।
আমাদের কথা আলাদা। এখানে আসা পর্যটকেরা কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। অনেকেই বলছিলেন, কাঁপুনি কম হলেও যে ভাবে টিভি-তে দেখাচ্ছে, তাতে সুনামি সত্যিই এলে যে আগের বারের মতো ধ্বংসলীলা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? হোটেলের লোকজন বা পুলিশ তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও সমস্যা বাড়ছিল তাঁদের মোবাইলে ঝড়ের মতো আসা ফোনে। যত সময় যাচ্ছিল টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ আর ফোনের দাপটে তত বাড়ছিল তাঁদের উদ্বেগ। আর কলকাতা থেকে আসা ফোনে যে ভাবে সেখানকার ভূমিকম্পের কথা রটছিল, তাতে এখান থেকে ফিরে শহরের দুর্দশা ভরা ছবি নিয়েও শুরু হয়ে গিয়েছিল কলকাতা থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে বেশ আলোচনা।
পরে টিভি আর রেডিও-তে চোখ রেখেই আস্তে আস্তে কমতে থাকে উদ্বেগ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ সুনামি সতর্কতা সরকারি ভাবে উঠে যাওয়ার পর চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করে মানুষ। |