দু’ঘণ্টায় দু’টি বড় কম্পনে ছড়াল আতঙ্ক
ন্দোনেশিয়ার অদূরে সমুদ্রতলে আজ এক শক্তিশালী ভূকম্প উস্কে দিল ২০০৪-এর সুনামি-আতঙ্ক।
আজ ভারতীয় সময় দুপুর দু’টো আট মিনিটে এক প্রবল ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ইন্দোনেশিয়া-সহ ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৮.৬। ভূকম্পের উৎসস্থল ইন্দোনেশিয়ার উত্তরে বান্দা আচে শহরের ৪৩৪ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৩ কিলোমিটার গভীরে। সমুদ্রের নীচে এত বড় মাপের কম্পন হওয়ায় ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশে সুনামি-সতর্কতা জারি করা হয়। এর মধ্যে তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মতো দেশগুলিতে জারি করা হয় চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। ২০০৪-এর সুনামিতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই দেশগুলিরই উপকূলবর্তী এলাকা। সে বারের ভূকম্পের কেন্দ্রস্থলও ছিল সমুদ্রতলের ৩০ কিলোমিটার নীচে, এ বারের কেন্দ্রস্থলের থেকে মাত্র দু’শো কিলোমিটার দূরে। সেই সুনামিতে ১৩টি দেশে মারা গিয়েছিলেন দু’লক্ষ তিরিশ হাজার মানুষ।
ঘণ্টা দু’য়েক পরে ফের ভূমিকম্প। আগের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি। এ বারের মাত্রাও ৮.২। কিন্তু এত বড় মাপের দু’টি কম্পন হওয়ার পরেও ইন্দোনেশিয়া বা অন্য কোথাও থেকে সুনামির বা বিশেষ ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ভূবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, এ বারের ভূকম্পনের ধরনটি ২০০৪ সালের ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প বা গত বছর জাপানের ভূমিকম্প থেকে আলাদা। প্রথম দু’বারের ভূমিকম্পে ভূস্তরের একটি প্লেট আড়াআড়ি ভাবে অন্য প্লেটের নীচে বেশ কয়েক মিটার ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার দু’টি প্লেট একে অপরের উপরে শুধু ঘষ্টে গিয়েছে। তাই কম্পনের মাত্রা প্রবল হলেও জলোচ্ছ্বাস হয়নি।
আবার কম্পনের কেন্দ্রস্থল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক গভীরে হওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী স্থলে সেই কম্পন যখন পৌঁছেছে, তা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে। যদি ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু হয় স্থলে, তবে আরও কম মাত্রার কম্পন থেকেও অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন হয়েছিল গুজরাত বা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে।
২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি গুজরাতে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৭.৮। গুজরাতেরই কচ্ছ প্রদেশে সেই কম্পনের উৎসস্থল ছিল। মারা গিয়েছিলেন কুড়ি হাজার মানুষ, জখম হন দেড় লক্ষেরও বেশি। গৃহহারা হয়েছিলেন প্রায় ৪ লক্ষ। তেমনই ২০০৫ সালে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ৭.৬ মাত্রার কম্পনে মারা যান ৭৫ হাজার মানুষ। আজ ইন্দোনেশিয়ার ভূকম্পনের মাত্রা অনেক বেশি হলেও কোথাওই বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আজকের ভূমিকম্পে ইন্দোনেশিয়া, তাইল্যান্ড, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। ২০০৪-এর সুনামিতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বান্দা আচের এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে পায়ের নীচে মাটি কেঁপেছে। টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আমরা সবাই আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে ছুটতে শুরু করি।” ভূমিকম্পের একটু পরেই অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়ুধোইয়োনো আশ্বাস দেন, দেশের সুনামি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বিশ্লেষণ অনুসারে এই ভূমিকম্প থেকে প্রবল জলোচ্ছ্বাস তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। ২০০৪-এর পরে তৈরি হওয়া এই অত্যাধুনিক পর্যবেক্ষণকেন্দ্রটির বিজ্ঞানীদের কথাই ঠিক বলে প্রমাণিত হয় পরে।
হাসপাতালের বাইরে ঠাঁই। ভূমিকম্পের জেরে বার করে
আনা হয়েছে রোগীদের। বুধবার চেন্নাইতে রয়টার্সের তোলা ছবি।
পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তাইল্যান্ডের উপকূলবর্তী শহর ফুকেতেও সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সেখানকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। শহরের নিচু এলাকা থেকে কিছু লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতেও ভূমিকম্প টের পেয়ে লোক জন বহুতল থেকে নেমে আসে।
কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ, অসম, আন্দামান-নিকোবর, কেরল, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। দিঘা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করে মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে আনা হয়। ফাঁকা হয়ে যায় চেন্নাইয়ের মেরিনা সমুদ্রসৈকত। বেশ কিছু ক্ষণের জন্য চেন্নাই বন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, চেন্নাইয়ে তাদের দু’টি দফতর থেকে প্রায় ৪০ হাজার কর্মীকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে উপকূল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গুয়াহাটিতে আজ প্রথম দফায় কম্পন অনুভূত হয় দুপুর সওয়া দু’টোয়। আবাসন, দফতর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। রাঁচির মৌসম ভবনের অধিকর্তা জ্ঞানেন্দ্রকুমার মোহান্তি জানিয়েছেন, এ দিন দুপুর ২টো ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে রাঁচিতেও খুব মৃদু কম্পন অনুভুত হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.