তৃণমূল ও নকশালপন্থী সংগঠন সিপিআই (এমএল)-এর মধ্যে সংঘর্ষে অশান্তি ছড়াল পাণ্ডবেশ্বরে। বুধবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন নকশালপন্থী সংগঠনের তিন জন। রাত পর্যন্ত পুলিশ মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করছে। জখমেরা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।
নকশালপন্থী সংগঠনের নেতা কীর্তন কোটাল জানান, এ দিন এলাকায় তাঁদের একটি মিছিল করার কথা ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, দুপুর ১টা নাগাদ তাঁদের সমথর্ক প্রশান্ত কোটালের বাড়িতে চড়াও হন তৃণমূলের বেশ কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মী। প্রতিরোধ করতে গেলে ধারালো অস্ত্রে প্রশান্তবাবুর মায়ের হাত কেটে যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে নকশালপন্থী সমথর্কেরা হামলাকারীদের ধাওয়া করলে তারা স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে পড়ে। নকশাল সমথর্কেরা পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কীর্তনবাবু অভিযোগ করেন, এর পরেই ব্লক তৃণমূল সভাপতি নরেন চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে হাজির হন। নানা এলাকা থেকে জড়ো হয় বেশ কিছু সমাজবিরোধীও। তখনই নকশাল সমর্থক অনন্ত বাউরিকে ছুরি মারা হয়। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অভিযোগ, বিকেল ৪টে নাগাদ নরেনবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূলের একটি সশস্ত্র মিছিল বাউরিপাড়ায় চড়াও হয়। সংঘর্ষ শুরু হলে ছোটন বাউরি নামে এক ব্যক্তির মাথায় গুলি লাগে। পায়ে গুলি লাগে বিবর বাউরি ও সঞ্জিত বাউরি নামে দু’জনের। তিন জনকেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। কীর্তনবাবুর দাবি, এলাকায় অবৈধ কয়লা ও লোহা কারবারের দখল নিতে এখন মরিয়া তৃণমূলের লোকজন। এলাকায় সিপিআই (এমএল) প্রধান বিরোধী হওয়ার কারণে তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে বারবার হামলা হচ্ছে।
তৃণমূল নেতা নরেনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, সিপিএমের দখলে থাকা বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েত যথাযথ ভাবে একশো দিনের কাজ করাচ্ছে না। এ দিন এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা প্রধানের কাছে এর প্রতিকারের দাবি জানাতে যান। নরেনবাবুর দাবি, এখন পাণ্ডবেশ্বরে সিপিএমের পুরনো কর্মীরা নকশালপন্থী সংগঠনে নাম লিখিয়েছে। সিপিএমের সঙ্গেও ওই সংগঠনের আঁতাত তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের লোকজনের জড়ো হওয়ার খবর পেয়েই নকশালপন্থীরা চড়াও হয়। তাদের হাতে তৃণমূলের নিমাই চক্রবর্তী, তন্ময় সিংহ, মধু ঘোষ প্রহৃত হন বলে অভিযোগ নরেনবাবুর। অজয় গড়াই ও নারায়ণ কর্মকার নামে দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরও করা হয় বলে অভিযোগ। তন্ময় সিংহ নামে তাঁদের এক সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানান নরেনবাবু।
সিপিএমের পাণ্ডবেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওরা ভোটের আগে জোট করেছিল। এখন নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা পাকাচ্ছে। এই গণ্ডগোলে আমরা কোনও ভাবে জড়িত নই। পুলিশ তদন্ত করুক।” পুলিশ জানায়, দু’পক্ষের মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জখম তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |