ফের আটক হল অবৈধ লোহা ধান্দার কাঁটা চলছে রমরমিয়ে
পুলিশ কমিশনারেট গঠন হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। তার পর থেকে পুলিশ বারবার দাবি করেছে, খনি ও শিল্পাঞ্চলে অবৈধ লোহা ও কয়লার কারবার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই দাবি যে পুরোপুরি সত্য নয়, কমিশনারেট এলাকায় ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনাতেই তা প্রমাণ হয়। গত কয়েক মাসে জেলার নানা জায়গা থেকে ধরা পড়েছে অবৈধ কয়লা বোঝাই লরি। কয়েক দিন আগেই রানিগঞ্জে চোরাই লোহা বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় রানিগঞ্জের এক প্রাক্তন বিধায়কের স্ত্রীকে। এই তালিকায় শেষ সংযোজন, বুধবার সালানপুরে একটি লোহাভর্তি পিক-আপ ভ্যান আটক। ঘটনাচক্রে, যেখান থেকে ভ্যানটি ধরা হয়, তার কাছেই রয়েছে রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির লোহা কারখানা।
এখান থেকে চুন কেটে নেওয়া হয়।
বিধায়ক অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কারখানার কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন সালানপুরের কল্যাণেশ্বরী ফাঁড়ি এলাকার মহেশপুরে কয়েক টন অবৈধ লোহা বোঝাই পিক-আপ ভ্যান দাঁড়িয়েছিল। পাশে ছিল একটি মোটরবাইক। আসানসোলের এসিপি অঞ্জলি আহুজা জানান, রাস্তা দিয়ে একটি পুলিশের গাড়ি আসতে দেখে ওই ভ্যানের চালক, খালাসি ও মোটরবাইকের আরোহী পালিয়ে যায়। পুলিশ ভ্যান ও বাইকটি আটক করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশ বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করলেও শিল্পাঞ্চলে রমরমিয়ে চলছে লোহার কাঁটা (অবৈধ লোহা লেনদেনের জায়গা)। রানিগঞ্জের রনাইয়ে চলছে চারটি কাঁটা। দৌলত, সইদুল, বেতাব ও গুজ্জা নামের চার জন এই কাঁটাগুলি চালায় বলে খবর। রামবাগানে গুদামঘর ও পাঞ্জাবি মোড়ে কাঁটা চালান গফ্ফর। তারবাংলায় কাল্লু, গির্জাপাড়ার সাহেবকুঠিতে কাঁটা চালান মল্লু। এ ছাড়া এগারা-সাহেবগঞ্জ রাস্তার উপরেও কাঁটা চলে।
এখানেই ছিল কাগজ কলের রেললাইনটি।
রানিগঞ্জের বল্লভপুরে একটি কাগজকলের পূর্বতন মালিকের চুনের ভাটি ছিল দামোদরের অদূরে। তার বহু টন চুন পড়েছিল নদের পাড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই চুন সংলগ্ন গ্রামের গার্ড ওয়ালের কাজ করত। গত বছরখানেক ধরে দুষ্কৃতীরা লোহা পাচারের জন্য ওই চুন ব্যবহার করছে। এলাকাবাসী জানান, প্রথমে লোহা রেখে তার উপরে চুন চাপিয়ে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিরঞ্জন গড়াই বলেন, “পুলিশকে জানালেও কোনও লাভ হয়নি। চুরি আটকানো যাচ্ছে না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামুড়িয়ার ব্যাঙ্কপাড়ায় কাঁটা চালান শামুয়া নামে এক ব্যক্তি। পেট্রোল পাম্পের কাছে সঞ্জয়, নিউ কেন্দা মোড়ে জাতীয় সড়কের পাশে জুরা, শ্রীপুরে ইরফান, পরিহারপুরে আলি মহম্মদেরা কাঁটা চালান। এলাকাবাসীর দাবি, বাগান ধাওড়ায় কাঁটার দায়িত্বে জালালউদ্দিন থাকলেও পিছনে রয়েছেন দিলদার নামে এক ব্যক্তি। কুলটির নিয়ামতপুর ও লছিপুরের মধ্যেও কাঁটা চলছে। এর দায়িত্বে রয়েছেন গুল বাহাদুর। রাধানগর, কেন্দুয়া বাজার ও ডিসেরগড়েও রমরমিয়ে চলছে অবৈধ লোহার লেনদেন। বারাবনির মাজিয়াড়া, গিরমিট কোলিয়ারির রাস্তার পাশে, দোমহানিতে একটি পাঠাগারের সামনে ও ফরিদপুর এলাকায় চারটি কাঁটা চলে বলে জানা গিয়েছে। অন্ডালের কাজোড়া, হরিপুর, বহুলাতেও কাঁটা চলছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। বাসিন্দাদের দাবি, এই শিল্পাঞ্চলের বেশির ভাগ লোহাই চলে যায় দুর্গাপুর মেনগেট এলাকায় মোসা নামে এক ব্যক্তির কাঁটায়। সেখান থেকে যায় নানা লোহা কারখানায়।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, হিরাপুরে দামোদর নদ পার হলে মধুকুণ্ডায় একটি মেটাল কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নৌকা, সাইকেল, ট্রেন-সহ নানা উপায়ে সেখান থেকে লোহা আসছে রামবাঁধের একটি কাঁটায়। সেটি চালান গিয়াস নামে এক ব্যক্তি। ইসিএলের পরিত্যক্ত খনি, বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা নানা কারখানা থেকে লোহা কেটে পাচার হচ্ছে।
এ দিন তাঁর কারখানার সামনে থেকে লোহা বোঝাই পিক-আপ ভ্যান আটক প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি বলেন, “খবরটা আমি শুনেছি। আমার কারখানার আশপাশে আরও অনেক লোহা কারখানা আছে। পুলিশ তদন্ত করলেই জানতে পারবে, কোথায় ওই লোহা পাচার হচ্ছিল।”
লোহাচোরেদের ধরার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করে পুলিশ। আসানসোলের এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। রানিগঞ্জের বাঁশড়ায় নরসিংহ এবং পাঞ্জাবি মোড়ে গফ্ফরের লোহার কাঁটায় অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।” এসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “মহকুমা জুড়েই অভিযান চলছে। দামোদরের পাড় থেকে বেশ কয়েক জনকে ধরাও হয়েছে।”
নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.