ট্রাফিক আইন ভাঙার পক্ষে সওয়াল করছেন রাজ্যের প্রধান শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরাই!
বেহাল গাড়িতে বাচ্চা ঠাসাঠাসি করে স্কুলে যাওয়া-আসা আটকাতে আসানসোলে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশি অভিযানের বিরোধিতায় নেমেছে তৃণমূল অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠন। তাদের দাবি, যাত্রী বহনের ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করতে হবে। অন্যথায় ‘বৃহত্তর আন্দোলন’ হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ অবশ্য ফের জানিয়ে দিয়েছে, আইন মেনেই পুলকারে নির্দিষ্ট সংখ্যক বাচ্চা তুলতে হবে। তার বেশি নেওয়া যাবে না।
পুলিশ অভিযান শুরু করায় মঙ্গলবারের পরে বুধবারও আসানসোলের বেশ কিছু স্কুলের পুলকার চলেনি। এ দিন সকালে আসানসোলের লোকো মাঠ সংলগ্ন এলাকায় একাধিক স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান গাড়ি চালকেরা। |
তাঁদের সমর্থনে আসরে নামে তৃণমূল অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠনও। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া বলেন, “পুলকার না চালানোকে আমরা সমর্থন করছি না। কিন্তু নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার কিছু বেশি যাত্রী বহন করার অনুমতি দিতে হবে পুলিশকে। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”
সরকারি আইন লঙ্ঘন করে পুলিশ এই অনুমতি কি করে দেবে? সব জেনেও সরকারি আইনের বিরোধিতায় কেন নেমেছেন তাঁরা? রাজুবাবুর সাফাই, “ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনে পুলকার চালাচ্ছেন চালকেরা। নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার বেশি পড়ুয়া বহন না করলে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাঁদের সংসার চলবে না।” পড়ুয়াদের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবেন বলেও তিনি ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন।
এ দিন গাড়ি চালকদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোলের এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। রাজুবাবুরা পুলকার চালকদের দাবিগুলি তাঁকে জানান। এডিসিপি অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি আইন মেনেই পুলকার চালাতে হবে। তিনি এ দিন ফের বলেন, “সরকার নির্দেশিত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে যত যাত্রী বহনের নির্দেশ আছে তার থেকে বেশি নেওয়া যাবে না। চালকের কাছে গাড়ির আসল কাগজপত্র, ফিট সার্টিফিকেট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।” পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালাবে বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
বহু স্কুলের পুলকার রাস্তায় না নামায় বুধবারও অভিভাবকেরাই বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়েছেন, নিয়ে এসেছেন। এতে তাঁদের সমস্যা বেড়েছে নিশ্চিত। কিন্তু পুলিশি অভিযানকে তাঁরা সমর্থন করছেন। তাঁদের আক্ষেপ, সম্প্রতি তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য ও গাড়ির কাগজপত্র বানানোর জন্য ছাত্র পিছু ভাড়া দ্বিগুন করেছে পুলকার চালকেরা। এর পরেও গাড়ির শংসাপত্র না থাকায় আতঙ্ক বাড়ছে অভিভাবকদের। দিনের শেষে রাজুবাবু জানান, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সব পুলকার চলবে। তবে পুলিশ ধরপাকড় চালালে ফের ‘আন্দোলন’ হবে বলে হুমকি দিতেও তিনি ভোলেননি।
এখন দেখার, আইনভঙ্গকারীদের ‘চাপে’র কাছে পুলিশ নতিস্বীকার করে কি না। |