চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ককে সংস্থার দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করতে বারণ করলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন। রীতিমতো চিঠি দিয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন এমডি। এই চিঠি ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
এ মাসে সংস্থার নিগমের তিন আধিকারিককে বদলি এবং কয়েক জনের দায়িত্ব রদবদলের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুরুগন। তাঁকে না জানিয়ে এ কাজ করা হয়েছে অভিযোগে ওই নির্দেশ স্থগিত রাখতে বৃহস্পতিবার মুরুগনকে চিঠি দেন নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। শনিবার মুুরুগন পাল্টা চিঠি দেওয়ায় নিগমের দুই শীর্ষ কর্তার ‘বিরোধ’ আরও বাড়ল বলেই মনে করছেন কর্মী-অফিসারদের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, এর জেরে সংস্থার বেহাল দশা ঘোচানোর উদ্যোগ মার খাবে। নিগমের কিছু কর্মীর বক্তব্য, “নিয়মিত বেতন মিলছে না। অবসরপ্রাপ্তদের কয়েক মাসের পেনশন বকেয়া। আর্থিক সঙ্কট নিয়ে ভাবার বদলে বিরোধ চলতে থাকলে নিগমের হাল ফিরবে কী করে?”
দলীয় মন্ত্রী বা বিধায়কের সঙ্গে আমলাদের বিরোধ অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। বেআইনি করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযানকে ঘিরে বিরোধ বেধেছিল বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন এবং রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (পিসিসিএফ) মির্জা আসগর সুলতানের। তার জেরে সুলতানকে কার্যত ‘কোণঠাসা’ করে নতুন পদ (পিসিসিএফ, জেনারেল) তৈরি করে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয় অতনু রাহাকে। কিছু দিন আগে বিভাগীয় মন্ত্রীর সঙ্গে ‘বিরোধে’ জড়িয়ে পড়ায় কারা দফতরের এক আইজি-কেও পদ থেকে সরানো হয়। |
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, এমডি-র দেওয়া বদলির তালিকায় নিগমের তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের ঘনিষ্ঠ এক আধিকারিকের নামও ছিল। পারচেজ বিভাগে চেয়ারম্যানের ‘পছন্দের’ আধিকারিকের বদলে অন্য এক জনকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশও দেন এমডি। এতে আপত্তি করে চিঠি দিয়ে প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠন তাঁকে সরানোর দাবিতে আন্দোলনে নামলেও এমডি ‘পিছু হঠেননি’। শনিবার পাল্টা চিঠিতে তিনি চেয়ারম্যানকেই নিগমের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ না করতে বলেছেন। চিঠিতে এমডি জানিয়েছেন, নিগমের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে তিনি সমস্ত কাজের
জন্য রাজ্য সরকার ও নিগমের ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরস’-এর কাছে দায়বদ্ধ। রবিবার রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমি কলকাতায় আছি। দফতরে গিয়ে চিঠি দেখে সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজনে গোটা ঘটনা সরকারকে জানাব।” ঘনিষ্ঠ মহলে নিগম চেয়ারম্যান অবশ্য এমডি-কে নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। শীঘ্রই পরিবহণ মন্ত্রীকে সব বলবেন বলেও জানিয়েছেন। তৃণমূল প্রভাবিত ‘এনবিএসটিসি ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন’-এর সভাপতি আব্দুর রহমানের দাবি, “রাজ্যপালের সম্মতি নিয়ে চেয়ারম্যানের মনোনয়ন হয়। এমডি-র ভূমিকা অনেকটা সচিবের মতো। চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে বদলি বা দায়িত্ব রদবদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “এমডি সরকার ও নিগম চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সিটুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন।” এ দিন মুরুগন অবশ্য বলেন, “দফতরের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলার নেই।” সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরস’-এর সিদ্ধান্তের রূপায়ণ করার কথা ম্যানেজিং ডিরেক্টরের। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের অনুমতি জরুরি নয়। তাই চেয়ারম্যানের চিঠি পেয়েও সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখেননি এমডি। এ-ও জানা গিয়েছে, তিন বছর বা বেশি সময় ধরে একই জায়গায় থাকা কর্মী ও আধিকারিকদের বদলির ব্যাপারে দু’মাস আগেই নিগমের পরিচালন বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সিটু প্রভাবিত ‘এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক জগৎজ্যোতি দত্ত বলেন, “সংস্থার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ আধিকারিকদের কোথায় বদলি করবেন, সেটা নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। সাধারণ কর্মীদের ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে বদলি হলে প্রতিবাদ করব। আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।” |