|
|
|
|
চিটফান্ড সংস্থার প্রতারণা, অভিযোগ আলিপুরদুয়ারে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শামুকতলা |
রাজ্যের একাধিক চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং তৃণমূলের সোমেন মিত্র। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা জাগিয়ে জনতার থেকে টাকা তোলা ওই সংস্থাগুলির ‘ভূমিকা’ নিয়ে সাংসদদের ‘আশঙ্কা’ যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলল আলিপুরদুয়ারে। সেখানে এক চিটফান্ড সংস্থার কর্তারা অন্তত ১৫ কোটি টাকা তছরুপ করে গা-ঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের নানা স্তরে। ‘বিচার’ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ‘প্রতারিত’ গ্রাহকেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে ওই এলাকায় ব্যবসা শুরু করে ওই সংস্থা। রানিকুঠি-সহ কলকাতার একাধিক ঠিকানায় অফিস রয়েছে বলে আমানতকারীদের কাছে দাবি করেছিল তারা। নানা মেয়াদের প্রকল্পে মাসে ১০-১৮ শতাংশ সুদ দেওয়ার ‘প্রলোভনে’ ভুলেছিলেন অনেকেই।
কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে অন্তত ২০টি ‘কালেকশন সেন্টার’ খুলে প্রায় ১,৫০০ এজেন্ট-কে কাজে নামিয়েছিল ওই সংস্থা। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক আমানতকারী টাকা গচ্ছিত রাখেন তাদের কাছে। অভিযোগ, তাঁদের একটা বড় অংশ না পেয়েছেন সুদ, না পেয়েছেন আসল। গত এক বছর ধরে প্রায় কোনও
টাকাই পাওয়া যাচ্ছিল না।
ওই সংস্থায় টাকা রাখা শামুকতলার রাজীব মণ্ডল, তপন অধিকারী, গোপাল রায়দের বক্তব্য, “ওরা সরকারি লাইসেন্স-সহ অনেক কাগজ দেখিয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই আমানতের টাকা সময়ে ফেরত দিচ্ছিল না। এখন কী হবে!” ‘প্রতারিত’দের অন্যতম তৃণমূলের শামুকতলা অঞ্চল সভাপতি বলাই পাল বলেন, “ওরা এক বছর ধরে টাকা না দিলেও ‘দিচ্ছি-দেব’ করায় কেউই
অভিযোগ করছিল না।”
মাস দু’য়েক আগে থেকে সংস্থার ‘কালেকশন সেন্টার’গুলি একে-একে বন্ধ হতে শুরু করায় আমানতকারীরা আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে জানান সংস্থার এজেন্ট নুহাস বরা, রতন পাল পুলক নাথেরা। তাঁরা বলেন, “সংস্থার কাগজপত্রে ভরসা করে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলাম। এখন তো লোকজন আমাদেরই ধরছে। আমরাও মারাত্মক বিপাকে পড়েছি।”
শনিবার আলিপুরদুয়ার থানা ও মহকুমাশাসক-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ওই চিটফান্ড সংস্থার চিফ ম্যনেজিং ডিরেক্টর অমৃতেন্দু ভট্টাচার্য, দুই ম্যানেজিং ডিরেক্টরপ্রশান্ত বেরা ও জাফরউল্লা খান, ম্যানেজার নন্দিতা চক্রবর্তী-সহ মোট ১১ জনের নামে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। আলিপুরদুয়ার থানার আইসি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১২০(বি) ধারায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” শনি ও রবিবার বহু চেষ্টা করেও অভিযুক্ত সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
উত্তরবঙ্গে অবশ্য চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে আমানতকারীদের প্রতারণার অভিযোগ নতুন নয়। বছরখানেক আগে মালদহের চাঁচলে একটি সংস্থা প্রায় ২২ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর আগে আলিপুরদুয়ারে অফিস খুলে আরও দু’টি চিটফান্ড সংস্থা এলাকার আমানতকারীদের প্রতারণা করে পালিয়েছে বলেও দাবি।
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য সন্তোষ সরকারের অভিযোগ, “রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার মদতে সারা রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো চিটফান্ড সংস্থা গজিয়ে উঠেছে। গোটা ডুয়ার্সে শ’দেড়েক এ ধরনের সংস্থা এখনও কাজ করছে।” যদিও তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লক সভাপতি অরুণ দাস অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের কষ্টের টাকা তছরুপ করেছে যে সংস্থা, তার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানাব।” আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অবিশ্বাস্য লাভের আশায় চিটফান্ডে আমানত করে মানুষ ভুগছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের সচেতন হতে হবে।” |
|
|
|
|
|