পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাঁকুড়া জেলার সাংগঠনিক নেতৃত্বে রদবদল করল তৃণমূল। রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে জেলা সভাপতি করা হল ওন্দার বিধায়ক অরূপ খাঁকে। জেলার দুই কার্যকরী সভাপতির মধ্যে অরূপ চক্রবর্তী বহাল থাকলেও সরানো হয়েছে শ্যামল সরকারকে। অরূপ খাঁ-ও কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। জেলা নেতৃত্বের একাংশের দাবি, জেলা সভাপতি হিসেবে শ্যামবাবুর ভূমিকায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাঁকে সরানো হল। শনিবার দলের বিধায়ক, সাংসদ ও জেলা নেতাদের নিয়ে তৃণমূল ভবনে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করে এই রদবদল করেন।
২০০৯ সালের ২৭ জুলাই কংগ্রেসের তৎকালীন জেলা সভাপতি শ্যাম মুখোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেন। সে দিন থেকে তিনিই তৃণমূলের জেলা সভাপতি ছিলেন। গত বছর বিধানসভা ভোটের পরে তিনি আবাসন মন্ত্রী হন। পরে তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে শিশুকল্যাণ মন্ত্রী করা হয়। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধানও তিনি। কয়েক মাস ধরে তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানোর কথা শোনা যাচ্ছিল। জেলা সভাপতির দৌড়ে অরূপ খাঁয়ের পাশাপাশি অরূপ চক্রবর্তী এবং ছাতনার বিধায়ক শুভাশিস বটব্যালের নাম শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সভাপতি হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অরূপ খা।ঁ জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে শ্যামবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করব।” নতুন জেলা সভাপতি বলেন, “দল আমাকে বড় দায়িত্ব দিয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।”
দলীয় সূত্রের খবর, এ বার কয়েকটি ব্লক সভাপতি বদলের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইন্দাসের ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেনকে মাস তিনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইন্দাসের কাজ দেখতে আপাতত স্থানীয় বিধায়ক গুরুপদ মেটেকে বলা হয়েছে। কোতুলপুর, জয়পুর, তালড্যাংরায় ব্লক নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। প্রসঙ্গত, ওই তিনটি ব্লক-সহ পাত্রসায়র, ইন্দাসে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। ব্লকস্তরের কিছু নেতার বিরুদ্ধে মারপিটে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও ওঠে। জয়পুর ও পাত্রসায়রে দুই তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় দলের বিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
জেলা তৃণমূলের কিছু নেতা জানান, ওই ব্লকগুলিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে ব্যর্থতার ‘শাস্তি’ হিসাবে ব্লক সভাপতি পরিবর্তন করার কথা ভাবছে রাজ্য নেতৃত্ব। জেলা কার্যকরী সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “পাত্রসায়র ব্লকের দায়িত্ব আগে ভাগ করা হয়েছিল। এ বার ওই ব্লকে সভাপতির পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়কে। জেলা কমিটি গঠনের পরে জয়পুর-সহ কয়েকটি ব্লকের সভাপতি পদে রদবদল করবে রাজ্য নেতৃত্ব।” দক্ষিণ বাঁকুড়ার নেতা শ্যামল সরকার অনেক দিন দলের কার্যকরী সভাপতির পদে ছিলেন। এ বার তাঁকে সরিয়ে জেলায় একজন মাত্র কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। শ্যামলবাবু বলেন, “দলনেত্রীর আদর্শ মেনে কাজ করছি। দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলব।” |