জেলা নেতৃত্বের একাংশ দাবি করেছিলেন, সর্বক্ষণের জেলা সভাপতি চাই। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকেই জেলা সভাপতির পদে বহাল রাখলেন। সেই সঙ্গে জেলা চেয়ারম্যানের পদ তৈরি করে পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংহদেও-কে তার দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু তিনিও প্রশাসনের নানা কমিটির দায়িত্বে থাকায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক কাজে কতটা সময় দিতে পারবেন, তা নিয়ে কিছু জেলা নেতা প্রশ্ন তুলেছেন।
শনিবার তৃণমূল নেত্রী তৃণমূল ভবনে বৈঠক করে পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি ও জেলা চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করেন। জেলা সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তিন বিধায়ক রঘুনাথপুরের পূর্ণচন্দ্র বাউরি, কাশীপুরের স্বপন বেলথরিয়া ও মানবাজারের সন্ধ্যারানি টুডুকে। জেলা তৃণমূল যুব সভাপতির পদ থেকে সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আগের চার জেলা সাধারণ সম্পাদককে বহাল রাখা হয়েছে। জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি করা হয়েছে গৌতম রায়কে। তিনি দলের যুব সংগঠনের জেলা সহ সভাপতি ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি ছিলেন।
গত লোকসভা নির্বাচনের পরে কে পি সিংহদেও-কে সরিয়ে তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেস থেকে আসা শান্তিরাম মাহাতোকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেন। কে পি সিংহদেও-কে দলের অন্যতম রাজ্য সহ সভাপতি করা হয়। বস্তুত এর পর থেকেই জেলা তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তুঙ্গে ওঠে। শান্তিরামবাবুর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানান জেলা নেতৃত্বের একাংশ। পরে রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে বিরোধ প্রশমিত হয়। কিন্তু সম্প্রতি ফের শান্তিরামবাবুর বিরোধী গোষ্ঠী পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষ্যে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য সর্বক্ষণের জেলা সভাপতির দাবি তোলেন। রাজ্য নেতৃত্বকেও তাঁরা দাবি জানিয়েছিলেন।
তৃণমূলের কিছু জেলা নেতার মতে, কে পি সিংহদেও-কে জেলা চেয়ারম্যানের পদে বসিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে বিরোধ প্রশমিত করার সুকৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। একই সঙ্গে শান্তিরামবাবুকে জেলা সভাপতির পদে রেখে দিয়ে তাঁর কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শান্তিরামবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা অবশ্য এতে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাঁরা জানিয়েছেন, শান্তিরামবাবুর মতই কে পি সিংহদেও-ও বিধায়ক এবং কিছু সরকারি কমিটিতে রয়েছেন। ফলে তিনিও দলের কাজে কতটা সময় দিতে পারবেন, তা নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ ক্ষেত্রেও দলীয় সংগঠন আগের মতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কে পি সিংহদেও বলেন, “নেত্রী দলের কর্মী ও মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। বিধায়কের দায়িত্বের সঙ্গে নেত্রীর দেওয়া নতুন দায়িত্বও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করব।”
বিধানসভা নির্বাচনের পরে বলরামপুর, সাঁতুড়ি ও পাড়ায় তৃণমূলের সঙ্গে যুব সংগঠনের বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিকবার দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, শান্তিরামবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে তাঁর অনুগামী গৌতম রায়কে জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি করে শীর্ষ নেতৃত্ব কার্যত শান্তিরামবাবুর প্রতি আস্থা জানিয়েছেন। শান্তিরামবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। তাই তাঁকে অনুগামী ছিলেন না। সুদীপবাবুর বক্তব্য, “দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করেছি। নতুন দায়িত্বও একই ভাবে পালন করব।”.শান্তিরামবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে দলকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এবং সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য জেলা কমিটির কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।” |