ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে চাষের ব্যাপক ক্ষতি কেশপুরে
মাত্র কয়েক মিনিটের ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে তোড়ে শিলাবৃষ্টি। তাতেই সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে কাকলি দিগারের পরিবারে। নামমাত্র জমি। মজুর খেটে সংসার চলে। ধার করে গত বছর নতুন বাড়ি তৈরি করেছিলেন। অ্যাসবেসটসের ছাউনিও দিয়েছিলেন। শিল পড়ে সেই ছাদের যত্রতত্র ফুটো তৈরি হয়েছে। তা দিয়ে বৃষ্টির জল পৌঁছচ্ছে ঘরে। রবিবার সকালে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে কাকলিদেবী বলেন, “দেনা করে ঘর তুলেছি। অধিকাংশ টাকা এখনও শোধ হয়নি। তার মধ্যেই এই ঘটনা। কী ভাবে সংসার চলবে, ভেবে পাচ্ছি না।”
কেশপুরের ধলহারা অঞ্চলের নারায়ণচকে থাকেন কাকলিদেবী। স্বামী তপন দিগার অন্যের জমিতে মজুর খাটেন। মজুর খাটেন কাকলিদেবীও। এক ছেলে, এক মেয়ে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও রবিবার সকালে মজুর খাটতে গিয়েছিলেন তপন। নারায়ণচকের এই পরিবারের মতো অসহায় অবস্থা কেশপুরের আরও বেশ কয়েকটি পরিবারের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কারও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও বা ফসল নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো, তিল, সব্জি চাষ। এ দিন সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন কেশপুরের বিডিও ইন্দ্রজিৎ সরকার। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চলছে। তবে প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, প্রায় ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির বোরো চাষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির তিল এবং ৩০০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে।
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
গত ক’দিন ধরেই জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। শনিবার বিকেলে কেশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টিতে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝেঁতলা, আনন্দপুর, ধলহারা প্রভৃতি এলাকার অধিকাংশ কৃষক উদ্বেগে রয়েছেন। নারায়ণচকে বাড়ি নীরোদ দোলইয়ের। ক্ষুদ্র কৃষক। এক বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছিলেন। তাঁর কথায়, “গতকাল বিকেলের ঝড়- বৃষ্টিই আমাদের ক্ষতির মুখে ফেলল। জমি থেকে এ বার আর ফসল পাওয়া যাবে কি না, বুঝে উঠতে পারছি না।” একই বক্তব্য বিশ্বনাথ দিগার, স্বপন সাউ, অজিত ঘোড়ইয়ের। ২৫ কাঠা জমি রয়েছে অজিতের। মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে বোরো চাষ করেছিলেন। তাঁর কথায়, “কী ভাবে ঋণ শোধ করব, তাই ভাবছি।” চাঁদবাড়ের সেখ আলমাস আলি বলেন, “আর ক’দিন পরেই ফসল উঠত। তার মধ্যে এই পরিস্থিতি। আমরা সকলেই চিন্তায় আছি।” স্বপন বলছিলেন, “অবস্থা যা তাতে মনে হচ্ছে মাঠ থেকে শুধু খড়ই পাওয়া যাবে।”
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কেশপুরে এ বার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে তিল চাষ এবং ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছিল। এরমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসলই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.