দু’টি অঘটনেরই বিহিত চায় শহর
দু’টি ঘটনা। ‘অঘটন’। দু’-ক্ষেত্রেই শোরগোল হয়েছে বিস্তর। এখনও হচ্ছে। কিন্তু দু’-ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ‘লঘু’ করার অভিযোগ উঠেছে। তাই অভিযুক্তদেরও রেহাই পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ‘প্রভাবশালী’ বলেই কি অভিযুক্তরা ছাড় পেয়ে যাবে শেষ পর্যন্ত? আশঙ্কা, প্রশ্ন সেখানেই।
মেদিনীপুর শহরের আম-আদমি কিন্তু বিহিত চাইছেন দু’টি ক্ষেত্রেই। ন্যায়-বিচারের স্বার্থে, নিরাপত্তার স্বার্থেই।
২০০৮ সালের ৮ অগস্টের রাত। মেদিনীপুর শহরের স্টেশন রোড লাগোয়া এলাকার একটি হোটেলের কর্মী প্রসূন অধিকারীকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল একটি টেলিভিশন প্রোডাকশন সংস্থার প্রযোজক-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। তারা তখন মদ্যপ অবস্থায়। একটি ‘রিয়্যালিটি শো’য়ের শুট্যিং করতে ওই প্রোডাকশন সংস্থার লোকজন মেদিনীপুরে এসেছিল। ঘটনায় গ্রেফতার হন দুই প্রযোজক রাজীব মেহেরা, গৌতম জৈন ও সোমনাথ রায়চৌধুরী নামে ওই ‘শো’-য়ের এক প্রতিযোগী। মাথায় গুরুতর চোট পাওয়া প্রসূনের মৃত্যু হয় কয়েক দিন পরে হাসপাতালে।

নিহত হোটেলকর্মী
প্রসূন অধিকারী
পুলিশ প্রথমে খুনের মামলাই রুজু করেছিল। কিন্তু চার্জশিটে খুনের ধারা (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা) বাদ দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘লঘু’ ধারা দেয় (৩২৩, মারধর)। বিচারক সেই চার্জশিট গ্রহণও করেন। নিহতের পরিবার চার্জশিট গ্রহণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেদিনীপুর জেলাজজ কোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালত ফের শুনানির নির্দেশ দেয়। এর পর পুলিশ ‘৩০৪-এ’ ধারায় (অবহেলাজনিত মৃত্যু) চার্জশিট পেশ করে। কিন্তু নিহতের পরিবারের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে খুনের ধারাতেই চার্জশিট দেওয়া উচিত। বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন। নিহতের পরিবারের তরফে এ-সংক্রান্ত এক আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে শুনানি চলছে। শুনানির পরবর্তী দিন রয়েছে আগামী ১৬ এপ্রিল। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রসূনের পরিবারের আইনজীবী মৃণাল চৌধুরীর বক্তব্য, “পুলিশের কাজ তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা। বিচার করা নয়!” তাঁর কথায়, “লঘু ধারাই যদি হয় তা তো শুনানির পর হবে। তার আগে আদালত কী ভাবে পুলিশের এক-তরফা রিপোর্ট গ্রহণ করতে পারে?” মৃণালবাবুর বক্তব্য, “ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাঁচ হোটেলকর্মী তাঁদের জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, প্রসূনকে ছাদ থেকে জোর করে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্তদের পক্ষে যাঁরা জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁরাও বলেছেন মারধরের পর হঠাৎই একটা ধপ করে আওয়াজ হয়। মাঝে কী ঘটেছে, তাঁরা জানেন না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও গভীর আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অভিযুক্তদের বাঁচাতে এই সব তথ্য-প্রমাণকে বাদ দিয়ে পুলিশ দু’-দু’বার লঘু ধারা দিয়েছে।”
এখন আদালতের উপরই ভরসা করে আছে প্রসূনের পরিবার। তরতাজা এক যুবকের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের শাস্তি চান ওই পরিবারের মতোই শহরের বাসিন্দারাও। তাঁরা মনে করেন, ন্যায়বিচারের সঙ্গে শহরের সুনামও জড়িত। দোষ করে পার পেয়ে যাওয়ার কোনও ক্ষেত্র তৈরি হলে মেদিনীপুর শহরে এসে বাইরের লোকের অপরাধের প্রবণতা বাড়বে।
অগ্নিকাণ্ডের দিন মেদিনীপুরের সেই বেসরকারি হাসপাতাল
সম্প্রতি শহরের আরও এক ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ‘লঘু’ করারই অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ মার্চের সকাল। মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরের এক বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বেসমেন্টে আগুল লাগে। সেখানে দাহ্যবস্তু মজুত ছিল বলে অভিযোগ। দমকলের রিপোর্টে বেসমেন্টে গ্যাস সিলিন্ডার থাকারও উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। জীবন নিয়েই টানাটানি পড়ে যায় রোগীদের। সামনে আসে কলকাতার আমরি-র স্মৃতি। প্রশ্ন ওঠে, কলকাতার ওই ঘটনার পরেও কেন বেসমেন্ট খালি করল না কর্তৃপক্ষ। কেন সেখানে স্টোররুম ছিল। অসুস্থদের আরোগ্যের জন্য যে প্রতিষ্ঠান, সেখানে জীবন নিয়ে জুয়াখেলা কেনসেই প্রশ্নই বড় হয়ে ওঠে। ঘটনার পর গ্রেফতারও হন হাসপাতালের ৪ কর্তা। পরে অবশ্য তাঁরা জামিন পেয়ে যান। অভিযোগ, এ ক্ষেত্রেও কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে মামলা ‘লঘু’ করছে পুলিশ। স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অভিযুক্তরা ‘প্রভাবশালী’ বলেই কি এই অবস্থা? ফের একই প্রশ্নের মুখোমুখি প্রশাসন। আবারও আশঙ্কা সব ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার।
পুলিশ মামলা লঘু করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঘটনার দিন রবীন্দ্রনগরের এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর পরিজন বলেন, “মামলা যদি লঘু করা না হত, অভিযুক্তরা এত তাড়াতাড়ি ছাড়া পেতেন না।” তাঁর কথায়, “ওই দিন সকালের ঘটনা মনে পড়লে এখনও ভয় হয়। কী ভাবে যে আমার আত্মীয়কে নিয়ে নীচে নেমেছি, তা ভাবলে এখনও শিউরে উঠি।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে থেকে সচেতন হলে এ ঘটনা ঘটত না। কলকাতার হাতিবাগান বাজারে অগ্নিকাণ্ডে যেখানে পুলিশ জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে, সেখানে মেদিনীপুরে কেন জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হল?”
শহরের বাসিন্দা অনুপ রায় বলেন, “আমরা পুলিশের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করি। দোষ যেই করুক, প্রভাবশালী কিংবা গরিব, শাস্তি একই হওয়া উচিত।” একই বক্তব্য পম্পা চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “কোনও মামলার ক্ষেত্রেই অভিযোগ ‘লঘু’ করা উচিত নয়।”
দুই ঘটনারই বিহিত চাইছে মেদিনীপুর।

—ফাইল চিত্র


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.