সম্পাদকীয় ২...
পদ্মলোচন
ত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘চাওয়াপাওয়া’ ছবিটি যাঁহারা দেখিয়াছেন, তুলসী চক্রবর্তীর হোটেলটি তাঁহারা ভুলিতে পারিবেন না। ভাঙাচোরা একটি বাড়ি, স্বয়ং মালিকই পাচক ও বেহারা, তাহার নামটি ‘গ্র্যান্ড হোটেল’। এ রাজ্যের নূতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলি সেই দৃশ্যটি মনে পড়ায়। সাধারণ মানের, সামান্য সুবিধাযুক্ত হাসপাতালের গায়ে ‘মেডিক্যাল কলেজ’ বোর্ড ঝোলানো হইয়াছে, প্রতিষ্ঠানগুলি তকমার সহিত আঁটিয়া উঠিতে পারিতেছে না। সম্প্রতি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে এক মহিলা ধর্ষণের ফরেন্সিক পরীক্ষা করাইতে গিয়া প্রত্যাখ্যাত হইয়াছেন, কারণ সন্ধ্যার পর হাসপাতালে কোনও বিশেষজ্ঞ উপস্থিত নাই। মালদহ জেলা হাসপাতাল হইয়াছে মেডিক্যাল কলেজ, কিন্তু শিশুমৃত্যুর মিছিল চলিতেছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হইতে স্নায়ুতন্ত্রের সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্যও কলিকাতায় রোগী পাঠানো হইতেছে, কলিকাতায় স্থান না পাইয়া রোগী গিয়াছেন কটকে। এই খবরগুলি হিমবাহের চূড়ার ন্যায় সমস্যার পরিধি নির্দেশ করিতেছে।
সমস্যার বিপুলত্ব সত্যই ভয়ঙ্কর। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল আবশ্যক, তাহা নির্মাণ হয় নাই। ক্লাসঘরও নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় নাই। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অবস্থাও তথৈবচ, সেখানে নূতন শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ভর্তিও অনিশ্চিত। মেডিক্যাল কাউন্সিলের ছাড়পত্র পাইলেও এই হাসপাতালগুলি বস্তুত ‘মেডিক্যাল কলেজ’ হইয়া উঠিতে পারে নাই। ফলে রোগী এবং ছাত্রছাত্রী, উভয়ই আতান্তরে পড়িয়াছে। বহরমপুর হাসপাতালটি এখনও মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন পায় নাই, সেখানেও কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। অথচ চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলিতেছে সব প্রতিষ্ঠানে। যেখানে সার্জন রহিয়াছেন সেখানে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নাই, যেখানে রেডিয়োথেরাপিস্ট রহিয়াছেন সেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় না। এই এলোমেলো অবস্থাটি যাঁহারা সৃষ্টি করিয়াছেন, সেই সরকারি কর্তারা কাহার নিকট দায়বদ্ধ, কোন মানদণ্ডে তাঁহাদের কাজের মূল্যায়ন হইয়া থাকে, তাহা রাজ্যবাসীর নিকট অপার বিস্ময়ের বিষয়।
বামফ্রন্টের শাসনকালে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে অবনতি শুরু হইয়াই গিয়াছিল। যে কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায়, মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও স্বজনপোষণ এবং দলীয় প্রভাবের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে উৎকর্ষ কমিতেছিল। নূতন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করিয়া আসনসংখ্যা বাড়াইবার প্রয়াস শুরু হইবার সময় হইতেই আবশ্যক পরিকাঠামো নিশ্চিত করিবার কাজে রাজ্যের ব্যর্থতা প্রায় ধারাবাহিক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক উপস্থিত নাই, ক্লাস করিবার ঘর নাই, বিশেষজ্ঞ বসিয়া আছেন রোগী নাই, রোগী চিকিৎসা না পাইয়া ভিনরাজ্যে যাইতেছে, অব্যবস্থার এমন প্রকট ও সর্বগ্রাসী রূপ ইতিপূর্বে দেখা যায় নাই। এই অবস্থায় চুপ করিয়া থাকা অপরাধ। ইহার প্রতিকার দাবি না করিলে অন্যায় হইবে। রাজ্যে নূতন সরকার আসিবার পর হইতে একটি বাঁধা গত শোনা যাইতেছে, দ্রুত উন্নতি আশা করিবেন না। সময় লাগিবে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির হাল দেখিয়া রাজ্যবাসীর কণ্ঠ চিরিয়া আর্তনাদ বাহির হওয়াই স্বাভাবিক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.