‘এ ও এ ভারত। শান্তি বজায় থাকুক।’
এ ও এ মানে, আল্লা ওহ্ আকবর। পাকিস্তানের বিশেষ বিমানটি দিল্লির পালাম বিমানবন্দরের টারম্যাক ছোঁয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করলেন বিলাবল।
|
মৈনুদ্দিন চিস্তির
দরগায় বিলাবল। |
বেনজির-পুত্র, বিলাবল ভুট্টো জারদারি। পাকিস্তান পিপলস পার্টির ২৩ বছর বয়স্ক, অক্সফোর্ড-শিক্ষিত চেয়ারম্যানের এটিই প্রথম ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ আজ নিঃসন্দেহে ছিলেন গাঢ় রঙের পাঠান স্যুট পরা সুদর্শন এই যুবকই।
মনমোহন সিংহের বাসভবনে একটা লম্বা টেবিলে পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের। আসতে পারেননি সনিয়া গাঁধী। চিঠি পাঠিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিতে পারলেন না। অতএব মায়ের অনুপস্থিতিতে গাঁধী পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে রাহুলই দৌত্য করলেন ভুট্টো পরিবারের সঙ্গে। বিলাবলের বসার ব্যবস্থাও ছিল রাহুলের ঠিক পাশেই। |
দু’দেশের রাজনীতির দুই শীর্ষ পরিবারের নবীন প্রজন্ম। তাঁদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত রইলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, বিরোধী নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ প্রমুখ।
ভোজ-পর্ব চলল প্রায় পঞ্চাশ মিনিট। বিরিয়ানি, জায়তুনি মুর্গ শিক কাবাব, গোস্ত বররা কাবাব, ফিরনি আর কলকাতা থেকে আনা নরম পাকের সন্দেশ অনুষঙ্গে অনেকটাই সহজ হয়ে এল ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক কাঠিন্য। খেতে খেতেই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রহমান মালিকের সঙ্গে হালকা চালে জরুরি আলোচনা সারলেন চিদম্বরম। কৌতূহলী জারদারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুঝতে চাইলেন, সীমান্ত-বিরোধ সত্ত্বেও চিনের সঙ্গে কী ভাবে বাণিজ্য এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। মনমোহন তাঁকে বোঝালেন, বেজিং-এর সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে কী ভাবে নতুন মেকানিজম তৈরি করা হচ্ছে। বিলাবলের টুইট (তথ্য বলছে, ১৪ হাজারের বেশি ‘টুইট ফলোয়ার’ তাঁর) তাই লিখল, ‘রাহুল গাঁধী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ উপাদেয় ছিল। আমি এবং প্রেসিডেন্ট খুবই উপভোগ করলাম। পরস্পরের কাছে অনেক কিছু শেখার রয়েছে।’ |
রাহুলের সঙ্গে এ দিন বেশ খানিক ক্ষণ গল্প করলেন বিলাবল। বিলাবলের কথায় বারবারই উঠে আসছিল মা বেনজিরের স্মৃতি। সনিয়ার সঙ্গেও বিশেষ সখ্য ছিল তাঁর। বিলাবল টুইট করলেন, ‘‘মা বলতেন, প্রত্যেক পাকিস্তানির মধ্যে এক টুকরো ভারত রয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক ভারতীয়ের মধ্যে রয়েছে এক টুকরো পাকিস্তান।” মায়ের মুখে শোনা সেই ভারতের মাটিতে বিলাবলের এ বারের সফর অবশ্য বড়ই স্বল্পমেয়াদী। একটু বেশি সময় নিয়ে ফের ভারতে আসার জন্য বিলাবলকে বললেন রাহুল। রাহুলকেও পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন বিলাবল। রাহুল বললেন, তিনি অবশ্যই যাবেন।
ভোজ তখন প্রায় শেষের দিকে। মনমোহন জারদারিকে বললেন, অজমের শরিফে গিয়ে খ্বাজা সাহিব-এ দু’দেশের শান্তির জন্য যেন দোয়া করেন তিনি। মনমোহনের মুখের কথা কেড়ে নিলেন জারদারি। বললেন, দরগায় অবশ্যই তিনি দু’দেশের শান্তির জন্য প্রার্থনা করবেন। পিতার প্রার্থনায় পাশে ছিলেন পুত্র। শান্তির প্রার্থনা সঙ্গে নিয়েই তো এ দিন প্রথম টুইট-টি করেছিলেন বিলাবল। তার পর দিনভর যত টুউট করে গিয়েছেন, সেখানেঔ শান্তির কথাই বলেছেন তিনি বারবার। বললেন, এত দারিদ্র সত্ত্বেও দু’টি দেশ যত টাকা প্রতিরক্ষায় খরচ করে, সেটা অত্যন্ত লজ্জার কথা। বললেন, পরমাণু অস্ত্রের সাহায্যে পরস্পরকে ধ্বংস করা নয়, দু’দেশের উচিত শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, বাণিজ্যে পরস্পরের হাত ধরা।
বিলাবল ভুট্টো জারদারি, পাক রাজনীতির নতুন প্রজন্ম! |