অবশেষে এমআরআই পরিষেবা চালু হতে চলেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) এই যন্ত্র বসানো হবে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এপ্রিল মাসের শেষেই যাতে এমআরআই পরিষেবা চালু করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে। এর ফলে রোগীদের বেসরকারি পরীক্ষাগারে ছুটতে হবে না। যে বেসরকারি সংস্থাটি এখানে এমআরআই যন্ত্র বসাচ্ছে, তার ‘গ্রোথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার সুভাংশু রায়ের দাবি, “১.৫ তেসলা ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক এমআরআই যন্ত্র বসানো হবে এই হাসপাতালে। এতে পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে নিখুঁত।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যালের বক্তব্য, “এপ্রিল মাসের মধ্যেই এমআরআই চালু হয়ে যাবে।”
মেডিক্যালে এমআরআই করার জন্য রোগীদের থেকে ২৯৭৫ টাকা নেওয়া হবে। বেসরকারি সংস্থাটির দাবি, ওই মানের যন্ত্রে যে কোনও বেসরকারি সংস্থায় পরীক্ষা করাতে গেলে ন্যূনতম খরচ পড়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। গরিব মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধাও থাকছে। এক মাসে যত জনের এমআরআই করা হবে, পরের মাসে তার দশ শতাংশ রোগীর এমআরআই করা হবে নিখরচায়। অর্থাৎ কোনও মাসে ২০০ জনের এমআরআই করা হলে পরের মাসে ২০ জন রোগী নিখরচায় এমআরআই করাতে পারবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন রোগীর নিখরচায় পরীক্ষা করা হবে। সেই সঙ্গে এখানে টেলি-রেডিওলজি ব্যবস্থাও চালু করা হবে বলে সুভাংশুবাবু জানিয়েছেন। প্রয়োজনে কলকাতা থেকেই সংস্থার বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্টরা টেলি-রেডিওলজির মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। সুভাংশুবাবু বলেন, “বিশেষত, রাতের দিকের কথা ভেবেই টেলি-রেডিওলজির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কেন্দ্রে সব সময়েই টেকনিশিয়ানরা থাকবেন। কিন্তু যদি কোনও কারণে রেডিওলজিস্ট না থাকেন, তখন কলকাতায় আমাদের সংস্থায় কর্মরত রেডিওলজিস্টদের দিয়েই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হবে। যাতে রোগীদের হয়রান হতে না-হয়, সে কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
অনেক দিন আগেই পিপিপি মডেলে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এমআরআই যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করেছিল সরকার। কিন্তু নানা কারণে তা পেছোতে থাকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বেশ কয়েকটি সংস্থা এই পদ্ধতিতে হাসপাতালে এমআরআই বসানোর প্রতিযোগিতায় নামে। নানা দিক দিয়ে প্রভাব খাটানোরও চেষ্টা হয়। পরবর্তীকালে ‘আমরি’ এই বরাত পায়। সেই ‘আমরি’, যাদের কলকাতার ঢাকুরিয়ার হাসপাতালে গত ডিসেম্বরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। সংস্থাটির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। সংস্থাটি সম্পর্কে কঠোর মনোভাব নিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানুয়ারির গোড়ায় ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবে এসে সেই ‘মনোভাব’ প্রকাশও করেছিলেন। ইতিমধ্যে অবশ্য আদালত থেকে একে একে জামিন পেতে শুরু করেছেন সংস্থার কর্তারা। সরকারের স্বাস্থ্য-বিভাগের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগও শুরু করে দিয়েছে ওই সংস্থা। যার সূত্রেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে যন্ত্র বসাতেও আসছে তারা। |