নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
নদীর চরের জমি দখল নিয়ে রবিবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের বারোপেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। নাথুয়ার চর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের চর থেকে উচ্ছেদ্দ করতে এদিন ম্যাটাডর, পিকআপ ভ্যান এবং মোটর বাইকে চেপে কয়েকশো বহিরাগত লোক এলাকায় জড়ো হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ৫টি বাড়ি আগুনে ছাই হয়। কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ভাঙচুর ঠেকাতে গিয়ে জখম হন জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার এক এসআই। তাঁকে মাটিতে ফেলে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। জখম এসআই জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড গুলি চালায় বলে বাসিন্দারা দাবি করলেও পুলিশের তরফে তা স্বীকার করা হয়নি।
চরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙচুরের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। যদিও বারোপেটিয়ার কংগ্রেসি প্রধান মনোহরি রায়ের পাল্টা অভিযোগ, চরে বাসিন্দারা সরকারি জমি অবৈধ ভাবে দখল করে রয়েছেন। গত ২৫ মার্চ এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে গেলে এলাকার একাংশ বাসিন্দা তাঁকে নিগ্রহ করেন। প্রধানের দাবি, “নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদ করতেই এদিন গ্রামের সাধারণ মানুষ ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।” জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে বলেন, “এলাকার কিছু বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ জমা পড়েছে। এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে এদিনের ভাঙচুরের ঘটনা নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।” |
গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এদিন দুপুর একটা নাগাদ পিকআপ ভ্যান, মোটর বাইক করে বহিরাগতরা এলাকা ঘিরতে শুরু করেন। সে সময়েই এলাকা থেকে কোতোয়ালি থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসার আগেই লাঠি, তরোয়াল-সহ ধারাল অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীদের বাড়িতে চড়াও হতে শুরু করেন বহিরাগতরা। ভয়ে বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বের হয়ে পালাতে শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। সে সময়েই একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাঙচুর শুরু হওয়ার পরে এক এসআইয়ের নেতৃত্বে কয়েকজন কনস্টেবল এলাকায় পৌঁছলে বহিরাগতরা তাদের ওপরেও চড়াও হয় বলে অভিযোগ।
এলাকার বাসিন্দা শেফালি দাস, বাবুলাল দাসরা বলেন, “আগের দিন প্রধান গিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করার হুমকি দেন। এদিন তাঁর নেতৃত্বেই সশস্ত্র বহিরাগতরা গিয়ে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে জ্বালিয়ে দেয়।” এলাকার আরএসপি পঞ্চায়েত সতীশ রায় বলেন, “প্রধান ও তাঁর এক আত্মীয় এই এলাকার পুরানো বাসিন্দাদের উঠিয়ে দিয়ে নতুন কিছু বাসিন্দাদের বসাতে চাইছেন। প্রতিবাদ করাতেই এদিন সশস্ত্র আক্রমণ হয়েছে।”
খাস জমি হিসেব নথিভুক্ত থাকা এই এলাকায় দীর্ঘ দু’দশক থেকেই মানুষের বাস রয়েছে। গত দু-এক বছরে এলাকার জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। পঞ্চায়েত সূত্রেই জানা গিয়েছে, এলাকায় অন্তত তিনশো পরিবার বাস করেন। পুলিশেরও সন্দেহ, প্রধানকে নিগ্রহের পাল্টা হিসেবেই এদিন আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। প্রধান মনোহরি রায় বলেন, “আমাকে সেদিন নিগ্রহ করা হয়েছিল। তার অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তার প্রতিবাদেই এদিন গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এলাকায় প্রতিবাদ জানাতে যান। তাতে পুলিশ গুলি চালায়। তবে আমি নিজে যাইনি। বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া বা ভাঙচুর করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।” সদর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি দুলাল দেবনাথ বলেন, “এটা বামপন্থীদের সাজানো ঘটনা। নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়ে কংগ্রেসের নামে মিথ্যে প্রচার করছে।” |