আজ বিখ্যাত ডেনিশ লেখক এবং কবি হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন-এর জন্মদিন। শিশুদের নিয়ে তিনি প্রচুর রূপকথার গল্প লিখেছেন। তোমরা নিশ্চয় পড়েছ? ‘দ্য লিটল মারমেড’, ‘থাম্বেলিনা’, ‘দি আগলি ডাকলিং’। মনে পড়ছে? প্রতি বছর তাই এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুপাঠ্য পুস্তক দিবস’ হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। ‘আন্তর্জাতিক অটিজম (আত্মমগ্নতা রোগ) সচেতনতা দিবস’ও আবার এই একই দিনে পালিত হয়। কাল, ৩ এপ্রিল। ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে আগামী কাল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৮৪ সালের এই দিনেই উইং কমান্ডার (তখন স্কোয়াড্রন লিডার) রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দেন। কে ভুলতে পারে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন যে মহাকাশ থেকে ভারতকে কেমন দেখতে লাগছে ‘ম্যঁয় বিনা ঝিঝক কে কহ সকতা হুঁ... সারে জাঁহা সে অচ্ছা’। এই প্রসঙ্গেই জিজ্ঞাসা করি, তোমাদের কি অন্য এয়ারফোর্স পাইলটটির নাম মনে আছে, যিনি সয়ুজ টি-১১ মহাকাশ অভিযানে রাকেশ শর্মার সহযোগী ছিলেন? যত ক্ষণ তোমরা মাথা খাটিয়ে নামটি বার করছ, তত ক্ষণে আমি বরং আইপিএল-এর খবরটবর নিয়ে নিই। পরশু থেকেই তো শুরু হওয়ার কথা। |
• ১৯৮০ সালে স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা এবং উইং কমান্ডার রবীশ মালহোত্র দু’জন ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন সয়ুজ টি-১১ করে মহাকাশ-অভিযানে যাওয়ার জন্য। মস্কো শহরের কাছাকাছি স্টার সিটিতে অবস্থিত নভশ্চর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাঁরা আঠারো মাস প্রশিক্ষণ নেন। শর্মা মহাকাশে গিয়েছিলেন এক জন গবেষক মহাকাশচারী হিসেবে। মহাশূন্যে তিনি বায়োমেডিক্যাল এবং মেটিরিয়াল সায়েন্স সংক্রান্ত তেরোটি পরীক্ষা পরিচালনা করেন। এই কীর্তির জন্য তাঁকে অশোক চক্র প্রদান করা হয়।
• ১৯৬১ সালের ১ জুলাই হরিয়ানার কার্নাল শহরে কল্পনা চাওলা-র জন্ম। ১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচ ডি করার বেশ কিছু দিন পরেই তিনি ন্যাশনাল এয়ারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)-এ কাজ করতে যান। তত দিনে কল্পনা এক বা একাধিক ইঞ্জিন চালিত উড়োজাহাজ, জলে অবতরণ করতে পারে এমন বিমান এবং গ্লাইডার চালানোর জন্য বাণিজ্যিক পাইলট লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি নাসা-র ‘অ্যাস্ট্রোনট কোর্স’-এ যোগ দেন। পরের বছরেই কল্পনা তাঁর প্রথম মহাকাশ অভিযানের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত যিনি ১৯৯৭ সালে মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’য় করে মহাকাশে পাড়ি দেন। ২০০০ সালে তাঁকে আবার নিবার্চন করা হয় মহাকাশে যাওয়ার জন্য। এই অভিযানটি শুরু হয় বেশ কিছু বছর পর, ২০০৩ সালে। এটাই ছিল কল্পনার শেষ যাত্রা। মহাকাশ থেকে ফেরার পথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় যান্ত্রিক গোলযোগের ফলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় যানটি। কল্পনা এবং বাকি পাঁচ সহকর্মী এই দুর্ঘটনায় মারা যান।
• সুনীতা উইলিয়ামস তৃতীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যিনি মহাকাশে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর মা ছিলেন স্লোভেনীয়। সেই দিক থেকে তিনি হলেন দ্বিতীয় স্লোভেনীয় বংশোদ্ভুত যিনি মহাকাশে গিয়েছেন। মার্কিন নৌসেনার পাইলট হিসেবে সুনিতার ৩০০০ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে মহাকাশচারণের জন্য নাসা তাঁকে নির্বাচন করে। ২০০৬ সালে স্পেস শাটল ‘ডিসকভারি’তে চড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন-এর উদ্দেশে পাড়ি দেন সুনীতা। মহিলা হিসেবে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি দিন (১৯৫ দিন) কাটানোর রেকর্ড তাঁরই।
• প্রথম মানুষ হিসেবে সোভিয়েত মহাকাশচারী য়ুুরি গাগারিন ১৯৬১ সালে মহাকাশে পৌঁছন। এর আগে ১৯৬০ সালে যে কুড়ি জনকে এই অভিযানের জন্য মনোনীত করা হয়, তাঁর মধ্যে গাগারিনও ছিলেন। পরে যদিও এক মাত্র তাঁকেই বাছাই করা হয়। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল ভস্টক ১ (ভস্টক থ্রিকেএ-থ্রি)-এ চড়ে গাগারিন একা মহাকাশে যান। প্রথম মানুষ হিসেবে গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন গাগারিন। উড়ান শেষে মহাকাশযানটি আফ্রিকার আঙ্গোলার ওপরের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। শুনলে অবাক হবে, বলা হয় এই যানটির নামকরণ হয়েছিল একটি জাহাজের নাম অনুসারে, ঊনিশ শতকে অ্যান্টার্কটিকা আবিষ্কার করে যে জাহাজের অভিযাত্রীরা।
• নিল আর্মস্ট্রং দু’বার মহাকাশে গিয়েছিলেন। প্রথম বার ১৯৬৬ সালে প্রথম মার্কিন মহাকাশচারী হিসেবে জেমিনি ৮ স্পেসক্রাফ্ট-এ চেপে। আর অন্যটি ছিল ১৯৬৯ সালে। এই বছর অ্যাপোলো ১১-তে চড়ে তিনি এবং আরও দু’জন মহাকাশচারী এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিনস চাঁদে গিয়েছিলেন। চাঁদে প্রথম পা রাখার পরই তিনি সেই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন ‘দ্যাটস্ ওয়ান স্মল স্টেপ ফর (আ) ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড’। দলটি প্রায় আড়াই ঘন্টা চাঁদের পৃষ্ঠে কাটিয়েছিল।
• মহাকাশে প্রথম মহিলা মহাকাশচারী ছিলেন ভালেন্তিনা তেরেসকোভা। এর আগে যাঁরা মহাকাশে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন সামরিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ভালেন্তিনাই ছিলেন প্রথম অসামরিক ব্যক্তি যাকে মহাকাশে পাঠানো হয়। সেই সময় মহাকাশে ভস্টক সিরিজের মহাকাশযান পাঠানো হচ্ছিল। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন তিনি এই সিরিজের শেষ মহাকাশযান ভস্টক ৬-এ চড়ে স্পেস-এ পৌঁছোন। তিনি সেখানে দু’দিনের একটু বেশি সময় ছিলেন।
• এখন স্পেস স্টেশন ব্যাপারটা প্রায় সবাই জেনে গিয়েছেন। এখানেই এখন মহাকাশচারীরা মাসের পর মাস থাকেন এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। যেমন ধরো, প্রথম যে স্পেস স্টেশন মহাকাশে পাঠানো হয়, তার নাম ছিল স্যালাট-১, তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি। পাঠানো হয় ১৯৭১ সালে। তার পর ধীরে ধীরে আরও স্পেস স্টেশন মহাকাশে গিয়েছে। বর্তমানে যেমন রয়েছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এবং তিয়াংগং ১। চিন সম্প্রতি এই দ্বিতীয় স্পেস স্টেশনটি পাঠিয়েছে। রুশ মহাকাশচারী আন্দ্রিয়ান নিকোলায়েভ ছিলেন প্রথম, যিনি মহাকাশ থেকে প্রথম টিভিতে বার্তা সম্প্রচার করেন। মানুষ হিসেবে সবথেকে বেশি সময় মহাকাশে টিকে থাকার নতুন রেকর্ডও কায়েম করেন তিনি। এই সূত্রে জানিয়ে রাখি, আন্দ্রিয়ান হলেন ভালেন্তিনা তেরেশকোভার স্বামী।
• মহাকাশ, চাঁদ বা তারও দূরে অভিযান চালানো ছাড়াও মানুষ এখন মহাকাশে যাচ্ছে পর্যটক হিসেবেও। ডেনিস টিটো নামে এক মার্কিন ব্যবসায়ী ছিলেন প্রথম মহাকাশ পর্যটক, যিনি টাকা দিয়ে মহাকাশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে তিনি সাত দিন কাটিয়েছিলেন। এর পর পরই দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক শাটলওয়ার্থ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেগরি অলসেন তাঁকে অনুসরণ করেন। |
১ ভ্লাদিমির কোমারভ ছিলেন প্রথম মহাকাশচারী যিনি মহাকাশ অভিযানের সময় (১৯৬৭ সালে সয়ুজ ১ অভিযান) মারা যান। কেন?
২ ১৯৭১ সালে অ্যালান শেপার্ড মহাকাশে প্রথম কোন কাজটি করেছিলেন?
৩২০১১ সালে ‘ট্রান্সফরমারস্: ডার্ক অব দ্য মুন’ চলচ্চিত্রে কোন সত্যিকারের মহাকাশচারী একটি ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয় করেছেন?
৪ ১৯৮৬-২০০১ সাল পর্যন্ত যে রুশ স্পেস স্টেশনটি মহাকাশে ছিল, সেটির নাম কী?
৫ ১৯৭৯ সালে কোন স্পেস স্টেশনের ভগ্নাংশ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ভেঙে পড়ে?
৬ ২০০৭ সালে কে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে থাকার সময় বস্টন ম্যারাথনে অংশ নেন এবং গোটা দূরত্বটাই এই স্পেস স্টেশনে দৌড়ন? |
১) তাঁর ক্যাপসুলের প্যারাশুট ঠিক সময়ে খোলেনি ২) তিনি চাঁদে গল্ফ খেলেছিলেন
৩) এডউইন অলড্রিন ৪) মির ৫) স্কাইল্যাব ৬) সুনীতা উইলিয়ামস্ |