|
|
|
|
দলেরই একাংশ খুনের হুমকি দিচ্ছিল মানিককে, অভিযোগ |
শুভাশিস ঘটক • ক্যানিং |
ক্যানিংয়ের দলীয় নেতা মানিক পাইককে দলেরই একটি গোষ্ঠী খুন করার হুমকি দিচ্ছিল এবং দলের ‘সব স্তরেই’ সে কথা জানানো হয়েছিল বলে দাবি করলেন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির এক সদস্য।
শুক্রবার রাতে নাগরতলা গ্রামে বাড়ির জানলা দিয়ে গুলি চালিয়ে ক্যানিং-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মানিক পাইককে (৫৫) ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করে আততায়ীরা। নিহতের পরিবার পুলিশের কাছে তৃণমূলেরই ব্লক যুব সভাপতি হাসান মোল্লা-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী তথা ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল এই খুনের পিছনে ‘দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ রয়েছে বলে মানেননি। কিন্তু রবিবার ক্যানিং সদরের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন বৈদ্য বলেন, “কিছু দিন ধরে মানিকবাবুকে দলেরই একটি গোষ্ঠী যে খুনের হুমকি দিচ্ছিল, সে কথা দলের সব স্তরেই জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” তাঁর সংযোজন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে মানুষ আমাদের থেকে সরে যাচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটে কী হবে, ভাবতে পারছি না!” তবে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়া বলেন, “মানিকবাবুকে খুনের হুমকি দেওয়া হত বলে জানতাম না। ঘটনার পরে শুনছি।”গত ১১ মার্চ দলের ব্লক সম্মেলনে মানিকবাবুকে ব্লক সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাঁর পরিবারের লোকজন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের জানিয়েছেন, ওই দিনের পর থেকেই মানিকবাবুকে নানা ভাবে খুনের হুমকি দিচ্ছিল দলেরই কয়েক জন। পুলিশে এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ দায়ের করা না হলেও দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে তা জানানো হয়েছিল। পুলিশের অনুমান, দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বলেই সম্ভবত তা পুলিশকে জানাননি মানিকবাবু। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “খুনের পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকার সম্ভাবনা প্রাথমিক তদন্তের পরে জোরদার হয়েছে। তবে তদন্ত এখনও চলছে। অভিযুক্তদের কাউকে এখনও ধরা যায়নি।”
তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই দলের সঙ্গে ছিলেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত মানিকবাবু। তৃণমূল সূত্রের খবর, ক্যানিং-২ ব্লকে তাঁর নেতৃত্বেই সংগঠন মজবুত হয়। মূলত এলাকার কর্তৃত্ব কার ‘দখলে’ থাকবে তা নিয়েই মানিকবাবুর সঙ্গে দলের ক্যানিং-১ ব্লক সভাপতি শৈবাল লাহিড়ির গোষ্ঠীর দীর্ঘ দিনের ‘বিরোধ’। মাস ছয়েক আগেও এক বার মানিকবাবুর উপরে ‘হামলা’ হয়। সেই ঘটনাতেও ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে আসে। চলতি বছরের গোড়ায় সিপিএমের ক্যানিং জোনাল কমিটির সদস্য সওকৎ মোল্লা অনুগামীদের নিয়ে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সওকৎকে পাশে পাওয়ায় মানিকবাবুর ‘প্রভাব’ আরও বাড়ে। দলের জেলা নেতৃত্বের কাছেও তাঁর ‘গুরুত্ব’ বাড়ে। বিপক্ষ গোষ্ঠীর ‘বিরোধিতা’ সত্ত্বেও তৃণমূলের ক্যানিং-২ ব্লক সভাপতি করা হয় মানিকবাবুকে। ১১ মার্চ ওই ঘোষণার পরেই মানিক-বিরোধী গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের একাংশের চড়-থাপ্পড়, লাঠির বাড়ি পড়ে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যানের গাড়ির বনেটে, কাচে। তবে এ দিনও শৈবালবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মুখ খোলেননি তাঁর অনুগামীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আশা করছি, শীঘ্রই তাদের ধরা যাবে।” |
|
|
|
|
|