বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়
ঘনিষ্ঠের চাকরির জন্য তৃণমূল সাংসদকে চিঠি শিক্ষকের
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপোষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন, ‘ভুটা’র সম্পাদক তথা তৃণমূল শিক্ষা সেলের এক নেতার বিরুদ্ধে।
ভুটা’ সম্পাদক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ‘রিডার’ জয়ন্ত কুণ্ডু এক ঘনিষ্ঠ ছাত্রের নামে তদ্বির করে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে চিঠি লিখেছেন বলে অভিযোগ। চিঠির কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তৃণমূল শিক্ষা সেলের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। জয়ন্তবাবু নিজে চিঠি দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও স্বয়ং শুভেন্দুবাবু চিঠি পাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তিনি নাক গলাবেন না বলে জানিয়েছেন সাংসদ।
বাম আমলে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী-শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ের আড়ালে বাম নেতাদের ঘনিষ্ঠরাই প্রধানত সুযোগ পেয়েছেন বলে অনেক বারই অভিযোগ করেছেন তখনকার বিরোধীরা। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে শিক্ষাঙ্গনে দলতন্ত্র বন্ধের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল শিক্ষা সেলও ‘স্বচ্ছতা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েই গত বছর বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ভুটা) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রথম বারের জন্য ‘ভুটা’ দখলও করেন তৃণমূলপন্থী এবং অ-বাম শিক্ষকরা। এখন তাদের বিরুদ্ধেই স্বজনপোষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় বিড়ম্বনায় তৃণমূল শিক্ষা সেল।
সুমন প্রতিহার নামে যে ছাত্রের জন্য জয়ন্তবাবু সাংসদের কাছে তদ্বির করেছেন, সেই ছাত্রটি প্রাণিবিদ্যা বিভাগেরই গবেষক। সাংসদের কাছে ছাত্রটির তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতারও বিশদ বিবরণ দিয়েছেন জয়ন্তবাবু। তিনি লিখেছেন, ‘সুমন প্রতিহার নেট কোয়ালিফায়েড এবং পিএইচডি অ্যাওয়ার্ডেড। সুমনের মা স্বপ্না প্রতিহার এক জন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। পশ্চিম মেদিনীপুর সর্বশিক্ষা মিশনের সম্পাদিকা এবং আপনার পরিচিত শ্রী সুব্রত সরকার (রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একটি সংগঠনের জেলা সম্পাদক) মহাশয়ের খুব ঘনিষ্ঠ। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের
জেলা চেয়ারম্যান রমা গিরিরও ঘনিষ্ঠ।’ জয়ন্তবাবুর আর্জি, সাংসদ যেন উপাচার্যের কাছে সুমনের নাম ‘রেকমেন্ড’ বা সুপারিশ করেন।
বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর সেই জয়ন্তবাবুরই এখন দাবি, “এ রকম কোনও চিঠিই আমি লিখিনি।” যদিও চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন স্বয়ং শুভেন্দু। তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, “এ রকম চিঠি আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে আমার কিছু করণীয় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি নাক গলাই না। যোগ্যতম প্রার্থীদেরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাচাই করে নিয়োগ করবেন, সেটাই প্রত্যাশিত।” যাঁর জন্য এই ‘তদ্বির’, সেই সুমন প্রতিহারও প্রকারান্তরে চিঠির কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “ছাত্রের ভাল চেয়ে মাস্টারমশাই এমনটা করতেও পারেন।” তবে চিঠিতে আর যাঁদের নামোল্লেখ রয়েছে, তাঁদের অন্যতম সুব্রত সরকার জয়ন্তবাবুকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। রমা গিরিও সুমনকে ‘ঘনিষ্ঠ’ ভাবে চেনার কথা অস্বীকার করেছেন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একাদশ অর্থ পরিকল্পনায় ৩৭টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল। দীর্ঘ দিন ওই সব পদ পূরণ হয়নি। নতুন উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী সম্প্রতি শূন্যপদে নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছেন। উপাচার্য জানিয়েছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ হবে। গোপনীয়তা বজায় রেখে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞদের এনে ইন্টারভিউ বোর্ড গঠন করা হবে। তার পরেও ‘অস্বচ্ছতা’ নিয়ে গুঞ্জন চলছেই। আর সেই গুঞ্জনেই ইন্ধন জুগিয়েছে জয়ন্তবাবুর চিঠি। চিঠির কথা জেনে তৃণমূল শিক্ষা সেলের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বায়ক (যিনি ভুটা-রও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন, পরে ইস্তফা দেন) ইন্দ্রাণী দত্ত চৌধুরীর বক্তব্য, “আমরা বরাবর স্বচ্ছতার কথাই বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই আমাদের শিক্ষা সেলেরই এক জন সদস্য এ ভাবে চিঠি লেখায় আমি মর্মাহত। এটাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.