হোসে ব্যারেটোকে ২-১ এগিয়ে থাকা অবস্থায় তুলে নেওয়া নিয়ে সমালোচনার যে ঝড়ই উঠুক তাকে পাত্তা দিতে নারাজ সুব্রত ভট্টাচার্য।
সব বিতর্ক তুড়ি মেরে উড়িয়ে ম্যাচের পর মোহন টিডির ঝাঁঝালো মন্তব্য, “ওটা স্ট্র্যাটেজির অঙ্গ। সবার সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। ব্যারেটোকে তুলে নিয়ে ঠিক করেছি। তখন নতুন ফুটবলার দরকার ছিল। আমাকে হেয় করার জন্য অহেতুক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। ম্যাচটা আমরা জিততে পারিনি গোল নষ্ট এবং রক্ষণের সামান্য ভুলের জন্য। লিগের শেষে দেখব কে কোথায় থাকে।”
আই লিগ জয়ের স্বপ্ন বিলীন হয়ে যাওয়ার পর সুব্রত যখন স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোচ্ছেন তখন কেউ কোনও বিক্ষোভ দেখায়নি। ‘ব্যারেটোকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল’ সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে এই গুঞ্জন থাকা সত্ত্বেও।
কিন্তু ব্যারেটো-বিতর্ক অন্য মাত্রা পেয়ে যায় সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ডেম্পোর সহকারী কোচ মরিসিও আফন্সোর চমকপ্রদ মন্তব্যের পর। অসুস্থ ডেম্পো কোচ আর্মান্দো কোলাসোর জায়গায় মরিসিও সাংবাদিকদের সামনে এসে বলে দেন, “ব্যারেটোকে তুলে নেওয়ায় আমাদের মাঝমাঠের দখল নিতে সুবিধা হয়েছিল। ওটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।” মরিসিওর মন্তব্যকে আবার ঘুরিয়ে সমর্থন করে দেন সুব্রতর দলের কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। একই চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ পর। “ব্যারেটো উঠে যাওয়ার পর মাঝমাঠটা আমাদের ছেলেরা সেভাবে সংগঠিত করতে পারিনি। যেটা ব্যারেটো থাকার সময় হচ্ছিল,” বলে দেন মোহন-কোচ।
|
গোলের পর ব্যারেটোর
আলিঙ্গনে
ওডাফা।
রবিবার
যুবভারতীতে।
ছবি: উৎপল |
যা শুনে সুব্রত বেজায় চটেছেন। “কে কী বলল গ্রাহ্য করি না। ভারতের যে কোনও কোচের চেয়ে ফুটবলটা বেশি বুঝি। ব্যারেটো উঠে যাওয়ার পরও তিনটে গোলের সহজ সুযোগ পেয়েছি।” বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী মোহনবাগানের বাবলু এর পরের সংযোজন, “নিশ্চিত পেনাল্টি পাইনি। মহেশ বলটা নিজেদের বক্সে শুয়ে পড়ে হাত দিয়ে থামাল। এটা পেনাল্টি না হলে কোনটা পেনাল্টি? কই এ সব নিয়ে তো কেউ কিছু বলছে না।”
সুব্রতর মুখ থেকে ক্ষোভের যে লাভাস্রোতই বেরোক, র্যান্টি-কোকোদের সঙ্গে জেতা ম্যাচ ড্র হয়ে যাওয়ায় মনে হল বেশ হতাশ তিনি। এর কারণ সম্ভবত দু’বছর প্রিয় ক্লাবের ট্রফিহীন থাকার যন্ত্রণা। “জিততে পারলে লড়াইতে থাকা যেত। দেখা যাক কোথায় গিয়ে শেষ করতে পারি। চ্যাম্পিয়ন হব কখনও বলিনি। বলেছিলাম চেষ্টা করব যতটা ভাল জায়গায় থাকা যায়। সেই চেষ্টা করব।”
যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক সেই ব্যারেটো অবশ্য তাঁর ৬০ মিনিটে উঠে যাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। “আমি কী করব,” বলার সময় গলায় অবশ্য ধরা পড়েছে সামান্য উষ্মা। ওডাফাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন ম্যাচের পর তবে অন্য কারণে। “এর চেয়ে অনেক ভাল গোল করেছি। এটা সেরা নয়,” বলতে বলতে যখন ম্যাচের সেরা এগোচ্ছেন তখনই হুমড়ি খেয়ে পড়া এক অত্যুৎসাহী সমর্থকের পায়ের চাপে তাঁর চটি ছিঁড়ে যায়। প্রচণ্ড রেগে যান তিনি। আর কথা বলেননি।
রবিবারের চৈত্রের সন্ধ্যায় মোহনবাগান সদস্য-সমর্থকরা যখন আই লিগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ, তখন ডেম্পো শিবিরে খেতাব জয়ের আরও কাছে পৌছে যাওয়ার আনন্দ। হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করায় পর স্ত্রীর বারণ সত্ত্বেও প্রায় জোর করে কলকাতায় এসেছেন আর্মান্দো। সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা ডেম্পো কোচ বলছিলেন, “মেয়ে সাহস জোগাল বলে চলে এলাম। টিমে ছেলেদের পাশে এই সময়টা থাকার দরকার ছিল।”
আর্মান্দো অবশ্য মনে করেন, মোহনবাগানের কাছে এক পয়েন্ট পেয়ে যাওয়ায় ইস্টবেঙ্গল ছাড়া আর কাউকে প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে না। “এই ম্যাচটা জিততে চেয়েছিলাম। ড্র হওয়ায় হতাশ নই। আমাদের চারটি কঠিন ম্যাচ আছে। তবে তিনটেই ঘরের মাঠে। শেষ ম্যাচ প্রয়াগের সঙ্গে। তবে ২০ এপ্রিল ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারলেই হয়তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব,” বলে দেন আর্মান্দো।
কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। বুক চেপে ধরলেন একবার। কিন্তু তৃপ্তির হাসিটা আটকাবেন কি করে? এ বার জিতলে পাঁচ বার পাবেন মহার্ঘ আই লিগ। যা দেশের কোনও কোচের মুকুটে এখনও নেই। অদূর ভবিষ্যতে কেউ এই সম্মান পাবে বলেও মনে হয় না। |