ওডাফা-আলোতেও ঘুচল না দশকের যন্ত্রণা
ডেম্পো-২ (র‌্যান্টি-পেনাল্টি, কোকো)
মোহনবাগান-২ (ওডাফা-২)
জীবনে প্রথম পাড়ার দুই বন্ধু এক সঙ্গে যুবভারতীর গ্যালারিতে। এক জন মোহনবাগানকে প্রাণ দিয়ে দেবেন, অন্য জন ইস্টবেঙ্গলের জন্য রক্ত দিতে রাজি। পাড়ায় এই নিয়েই তাঁদের তুলকালাম। এই প্রথম তাঁরা একসঙ্গে চেঁচাচ্ছিলেন একটা ক্লাবের জন্য।
যদি ডেম্পো হারে তো দু’জনেরই লাভ!
মোহনবাগান-ডেম্পো ম্যাচে আসলে দর্শক ছিলেন প্রচুর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। এসেছিলেন পাড়ার মোহনবাগানের বন্ধুদের সঙ্গে, ডেম্পোর হার দেখতে।
রোমাঞ্চক ২-২ ম্যাচ শেষে বিষণ্ণ পদচারণায় তাঁদের বাড়ি ফেরা। আসল সূর্য আকাশে অস্ত যাচ্ছে তখন। আই লিগের আকাশে তাঁদের ক্লাবের সূর্যও অস্ত যাওয়ার পথে।
যে কোনও দুই বন্ধুর হাহাকার, যন্ত্রণা, আক্ষেপ নিয়েই রবিবাজারের ম্যাচ রিপোর্ট লেখা যায়।
মোহনবাগান সমর্থক: ওহ, আবার সেই যন্ত্রণা। আই লিগটা এ বারও চলে গেল। ইস্টবেঙ্গল, চার্চিল, পুণে, সালগাওকর সবাই রইল। আমরাই নেই। প্রথমার্ধ দেখতে দেখতে মনে হয়নি, ড্র করে ফিরব। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তো ওডাফা তিন গোল প্রায় করে দিয়েছিল। ডেম্পোর শুভাশিস অসাধারণ না বাঁচালে...।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক: কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল! এমনিতে মোহনবাগান বক্সে বল গেলেই আনন্দ, উত্তেজনা হয়। এই প্রথম মনে হচ্ছিল, ওরা যেন গোল না খায়। শিল্টন প্রথম দশ মিনিটে দুটো সিটার বাঁচানোর সময় চুপচাপই ছিলাম। শেষ দিকে শিল্টন সেভ না করলে তো ডেম্পো ৩-২ করে ফেলত! চেঁচিয়ে উঠেছিলাম ‘গোল’ বলে। সামলে না নিলে মার খেতাম!
হায় ঈশ্বর! তুমি কত নিষ্ঠুর। জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েও কেড়ে নিলে। রবিবার। ছবি: উৎপল সরকার
মোহনবাগান সমর্থক: একটাই বাঁচোয়া। ওডাফা পরের বারও আমাদের থাকছে। প্রথম পাঁচ মিনিটে তিনটে সিটার নষ্ট, বাইশ মিনিটে পেনাল্টি কিক বারে মারার পরেও যে কেউ দুটো অবিশ্বাস্য গোল করতে পারে, ওডাফাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। সাপের মতো একেঁবেকে দৌড়য়। বাজপাখির মতো ডানা ঝাপটায়। দুটো গোল দু’রকম। দ্বিতীয়টায় তো ডেম্পোর কিপারকে দাঁড়াতে দিল না।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক: এখনও বুঝতে পারছি না, খুশি হব, না দুঃখ করব। মোহনবাগানের আশা একেবারে শেষ। আমাদের তবু একটা আশা থাকল। আমরা ডেম্পোর চেয়ে ৬ পয়েন্টে পিছনে, ওরা ৮ পয়েন্টে। মারগাওতে ডেম্পোর সঙ্গে আমাদের খেলা। ওই ম্যাচটায় যদি আমরা প্রথমার্ধের মোহনবাগানের মতো খেলি, তা হলে একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকছে। নইলে কঠিন। এখন আমাদের ঘাড়ে পুণে, চার্চিল, সালগাওকর সবাই ধাক্কা মারছে।
মোহনবাগান সমর্থক: বাবলুদা এমনিতে এত বুদ্ধি ধরে, ওর সুনীলকে মাঝমাঠে খেলানোর স্ট্র্যাটেজিটা দারুণ। কিন্তু আজ পরের দিকে যে কী করল! এক গোলে পিছিয়ে পেনাল্টি নষ্ট করে ২-১ জিতছিলাম বহু দিন বাদে। আহা, কী ছবির মতো খেলছিল টিমটা। ওই সময় ব্যারেটোকে যে কেন তুলল বাবলুদা! ওকে এক ঘণ্টার সময় তুলে নেওয়াই সবচেয়ে বড় ভুল। তার পরেই ২-২। ডেম্পো বেঁচে উঠল। ব্যারেটো থাকার সময় ওডাফা সাপোর্টিং প্লে পাচ্ছিল। ডেম্পোর মহেশ গাউলি-রা সমস্যায় পড়ছিল। ওদের সেরা অস্ত্র মাঝমাঠ ব্যস্ত থাকছিল রক্ষণ সামলাতে। ব্যারেটোকে তুলে নেওয়ার পরেই ক্লাইম্যাক্স- র্যান্টির অন্য মূর্তি।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক: পেনাল্টি কিকটা পোস্টে লেগে বেরিয়ে যাওয়ার পরে নজরে এল, ওডাফা সুব্রতর কাছে এসে জল খাচ্ছে। তার পরে সেন্টার লাইনের ধারে অনেকক্ষণ একা দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছিল, মনঃসংযোগ বাড়াচ্ছে। ওখান থেকে দৌড় শুরু করেই প্রথম গোলটা। বলটা দুর্দান্ত বাড়িয়েছিল সুনীল ছেত্রী।
মোহনবাগান সমর্থক: ছেত্রীকে এই প্রথম ক্লাবে ভাল খেলতে দেখলাম। কাঠমান্ডুতে চ্যালেঞ্জ কাপের সময় ফিলিপাইন্স কোচ বলেছিলেন, সুনীলের আসল জায়গা মাঝমাঠ। এ দিন দেখে তাই মনে হল। ওডাফার দুটো গোলের পাস ওর বাড়ানো। বাবলুদাকে কী বলব! ব্যারেটোকে তুলবে তুলুক, ছেত্রীকে তো মাঝমাঠে রাখবে! ভাল খেলছিল। ওকে ফরোয়ার্ডে তুলে দিতে ফের খেলা ভুলে গেল। জুয়েল রাজা এত দৌড়ল, কিন্তু যা মোক্ষম মিস করল, সব বেকার।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক: আর্মান্দো কোলাসোর বুদ্ধি দেখে মনে হল, কোচ হো তো অ্যায়সা। বাইপাস অপারেশন করে ওই অবস্থায় এখানে এসেছিল। এসে কেল্লা ফতে। আর্মান্দো ঠিক সময়ে দুটো বদল নিল। সুব্রত ব্যারেটোকে তোলার পরেই আর্মান্দোর একটা বদল। এক মিনিটের মধ্যে আভ্রাঞ্চেস ও কার্ভালহো নামতেই খেলা ঘুরল। মনে হচ্ছে, আর্মান্দোর পাঁচটা আই লিগ জয় নিশ্চিত।
মোহনবাগান সমর্থক: রহিম নবির হ্যান্ডবলটা যদি পেনাল্টি হয়, তা হলে শেষ দিকে আমরা কেন পেনাল্টি পাব না? ওডাফার শট হাত দিয়ে থামিয়ে শুয়েই পড়েছিল মহেশ। ২-২ হওয়ার ঠিক পরেই। ওটা পেনাল্টি হলে ওডাফা আর মিস করত না। রেফারি দেখি আমাদেরই শুধু পুঁতে দেয়।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক: বুঝতে পারলাম না, আমাদের মর্গ্যান স্যর কেন এই ম্যাচটা ড্র চাইছিলেন। কী লাভ হল আমাদের? কলকাতা থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে গিয়ে ডেম্পো তো আমাদের বিরুদ্ধে চুটিয়ে খেলবে।
মোহনবাগান সমর্থক: খুব খারাপ লাগছিল, সব শেষ আর কিছু সমর্থক ম্যাচের পরে প্লেয়ারদের পিছনে দৌড়চ্ছিল। ওডাফা তো গাড়ি থেকে মুখ বের করে হাত নাড়তে নাড়তে গেল। নবি হাঁটছিল। আর পিছনে প্রচুর ছেলে জয়ধ্বনি দিচ্ছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, আমাদের স্বপ্ন শেষ। ব্যারেটোই দেখলাম গম্ভীর মুখে বেরিয়ে গেল। ও-ই আমাদের দুঃখটা বুঝবে। আর কেউ বোঝে না।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক: ওডাফার মতো একটা স্ট্রাইকার যদি আমাদের টিমে টোলগের পাশে থাকত! তা হলে আর দেখতে হত না। র্যান্টিই বরং অনেক ম্লান। মনে হচ্ছে, প্রয়াগে সই করার পরে ও চাপে ছিল। যাক গে বাবা, এ বার আর ওডাফার সামনে পড়তে হচ্ছে না! নইলে বিপদ হত! গোলের সামনে কী ভয়ঙ্কর রে!
মোহনবাগান সমর্থক: শেষ যে বার আমরা জাতীয় লিগ জিতেছিলাম, সে বার আমাদের শেষ ম্যাচের গোলদাতা আবদুল সালিউকে সংবর্ধনার মঞ্চে ডাকাই হয়নি। গ্যালারিতে শুনলাম, ওর দীর্ঘশ্বাস আমাদের পারফরম্যান্সে পড়ছে দশ বছর ধরে। কত দিন এই যন্ত্রণা বুকে করে বেড়াব? আমাদের মাঝমাঠে পাসার নেই, ডিফেন্সে ভাল বিদেশি নেই। রাকেশ মাসি ব্যান্ডেজ নিয়ে দারুণ খেলল। কিন্তু সে তো বাঁচায়, জেতাতে পারে না। এখন আমাদের ক্লাবে সব দোষই পড়ে কোচ, ফুটবলারদের উপর। তাদের চাকরি যায়। দল গড়ার কর্মকর্তারাই থেকে যায়। পরের বার যে কী মাথামুণ্ডুহীন টিম হবে!

মোহনবাগান: শিল্টন, নবি, কিংশুক, আনোয়ার (শুভাশিস), সুরকুমার, স্নেহাশিস (হাদসন), জুয়েল, রাকেশ, সুনীল, ব্যারেটো (মণীশ), ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.