‘কাপ’হীন প্রথম জন্মদিনের যন্ত্রণা
‘হায়, সম্ভব হলে তো সব বড় পরীক্ষার পরেই
দেশবাসীকে ওই রকম সুখ দিতাম’
৯৮৪-র পঁচিশে জুন ছেড়েই দিলাম।
২০০৮-এর পঁচিশে জুনেও কপিল দেব আর তাঁর সঙ্গীদের স্মৃতিকথা বড় করে সব কাগজে বেরিয়েছে। সব টিভি চ্যানেল দেখিয়েছে।
লর্ডসে যাঁরা কাপ জিতেছিলেন সেই চোদ্দো জনের জীবনে একটা দিন নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছে, যে দিন মিডিয়ার ফোনের ঝঙ্কার থামবে না। দিনটা হল চব্বিশে জুন। বেশি করে ভারতের প্রথম কাপজয়ী অধিনায়ককে। ওই দিনই তাঁকে ফোনে ধরা খুব দুষ্কর।
ওয়াংখেড়ের অবিস্মরণীয় সেই রাতে আতসবাজিগুলো তখনও জ্বলছে। টিভি নিউজ চ্যানেলে নাচতে নাচতে কপিল দেব ঘোষণা করেছিলেন, “এরা সামনে চলে এল। আমরা অতীত হয়ে গেলাম। এটাই ঠিক। আমাদের স্মৃতিকথা লোকে অনেক শুনেছে। এ বার মাহিদের পালা।”
সমস্যা হল স্মৃতিকথা বলবে কে? ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের এক বছরের জন্মদিনের সকালে যিনি মুম্বই-চেন্নাই ফ্লাইট ধরবেন, তাঁর মনে না আছে উৎসবের ‘উ’। না তাঁদের কীর্তি নিয়ে কথা বলার কোনও স্পৃহা। বিশেষ করে তাঁর রাজের এই এক বছরে ভারত যেমন কঠিনতম গিরিশৃঙ্গ জয় দেখেছে। তেমনই দেখেছে সমুদ্রের তলদেশ। আপাতত তলদেশটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। গিরিশৃঙ্গ জয় নয়।
নইলে তিনি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মিডিয়াকে এমন সন্তর্পণে এড়িয়ে থাকবেন কেন? রবিবার রাতে তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে ধোনি এই সাংবাদিককে যোগাযোগ করেন। জানান, ইন্টারভিউ দিতে পারবেন না। দু’চারটে প্রশ্নের উত্তর বড়জোর দিতে পারেন। কাপ জয়ের প্রথম বছরের জন্মদিনে যে উত্তেজনা থাকা উচিত, গলায় তার লেশমাত্র নেই। বরঞ্চ বিষাদগ্রস্ত এবং অনিশ্চিত মনে হল তাঁকে। চেন্নাইতে উৎসবের পরিকল্পনা তো কিছু নেই-ই, সে দিনের সহ-খেলোয়াড়দেরও হয়তো ফোন করবেন না। কপিলরা যা নিয়ম করে করতেন। ধোনি বললেন, “দিন দশ-বারো আমি মোবাইল থেকে সম্পূর্ণ দূরে। মোবাইল ব্যবহার করছিই না। কাজেই মনে হয় না কাউকে ফোন-টোন করব বলে।”
ওয়াংখেড়ের ফাইনালে তাঁর সেই চিরস্মরণীয় ছক্কার পর একই রকম নির্বিকার থেকে স্টাম্প তুলে নেওয়া দেখে দেব আনন্দ বলেছিলেন, “আমি ওর ফ্যান হয়ে গিয়েছি। ছেলেটা অবিচলিত থেকে ওই রকম ছক্কা মারল। নির্বিকার স্টাম্পটা তুলে নিল। পরের দিন গিয়ে ন্যাড়া হয়ে চলে এল। কী অসম্ভব সিনেম্যাটিক এই ধোনি!” মাসখানেক আগে প্রয়াত দেব আনন্দের প্রশংসার কথা আগেই শুনেছিলেন ধোনি। এ দিন বললেন, “আসলে আমার মাথাটা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। গত এক বছরে যখন দৃশ্যটা ফিরে ফিরে দেখেছি আর ভেবেছি, তখন আরও নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে আমার মাথাটা সত্যিই কাজ করছিল না। যুবরাজ ননস্ট্রাইকার এন্ড থেকে ওই রকম উত্তেজিত ভাবে এগিয়ে আসায় বুঝলাম জিতে গিয়েছি।”
আর এক বছর পর কী মনে হচ্ছে? রেসিপি কী ছিল বিশ্বকাপ জয়ের? ধোনি বললেন, “রেসিপি ছিল টিমের সবাই চোট-আঘাতহীন থাকতে পারা। ওটা একটা বিশাল ব্যাপার। বিশ্বকাপে আমার প্রতিটা প্রেস কনফারেন্সের কথা ভেবে দেখুন, প্রতিদিন আমি চোট-আঘাতহীন থাকতে পারার ইচ্ছের কথা বলতাম।” ধোনি এর পর যোগ করলেন, “আমাদের টিমের ভাগ্যটাই এত খারাপ যে অমুক সুস্থ হলে তমুক চোট পেয়ে যায়। সব সময় এ রকম চলে।” কোথাও যেন মনে হল চোটের ব্যাপারে তিনি বিশ্বকাপ ছাড়িয়ে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া সফরকেও গুঁজে দিলেন। মিনিট কুড়ি ফোনে কথা বলার একমাত্র এই অংশে অধিনায়ককে সামান্য উজ্জ্বল মনে হল। যখন বললেন, “দেড় মাস ধরে একটা টুর্নামেন্টে ফর্ম আর ফিটনেস ধরে রাখাটা বেশ কঠিন কাজ। সেটা আমরা করতে পেরেছিলাম বলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।”

বিশ্বজয়ের এক বছর
ফুল
• ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদেশে ও দেশে টেস্ট এবং এক দিনের সিরিজে হারানো
• ইংল্যান্ডকে দেশের মাঠে ওয়ান ডে সিরিজে ৫-০ হারানো
• সচিন তেন্ডুলকরের একশোতম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি
• ৩১ ম্যাচে ছ’টা সেঞ্চুরি, ১৬৩৬ রান করে বিরাট কোহলির উত্থান

কাঁটা
• ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পর পর দুটো টেস্ট সিরিজে ০-৪ হোয়াইটওয়াশ
• ইংল্যান্ডের কাছে বিদেশে এক দিনের সিরিজে হার
• অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে না উঠতে পারা
• এশিয়া কাপে গ্রুপ লিগে বিদায় • ওয়ান ডে ক্মপর্যায়ে দুই থেকে তিন • টেস্টে এক নম্বর থেকে তিন • দ্রাবিড়ের অবসর


কলকাতায় পৌঁছে গৌতম গম্ভীর
(২ এপ্রিল ওয়াংখেড়েতে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার)

উদ্দীপ্ত ধোনি থেকে ফের আবার তিনি ফিকে হয়ে যাওয়া ধোনি। “চোট একটা মারাত্মক ব্যাপার। পরপর চোট হতে থাকলে সেটা সামলানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে।” আবার তাঁর গলায় হতাশা। বোঝা গেল, টেস্ট সিরিজে ০-৮, ওয়ান ডে-তে ০-৩ এমন হিমশৈলের ধাক্কা যে কাপ জয়ের প্রথম বছরের রোমন্থনেও আগ্রহী হতে পারছেন না অধিনায়ক। ওয়াংখেড়েতে ফাইনালের পর সে দিন গোটা দেশ জুড়ে যা ঘটেছিল, অবিশ্বাস্য। সনিয়া গাঁধী পর্যন্ত রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। অমিতাভ বচ্চন তাঁর ব্লগে লিখেছিলেন, “দেখে মনে হচ্ছে ভারত বুঝি আবার স্বাধীন হল।” এক বছর পর সেই রাত্তিরের ফ্ল্যাশব্যাকে কী মনে হচ্ছে? ধোনি ম্লান গলায় বললেন, “মনে হচ্ছে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা তো আমাদের কাজ। দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানো আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। হায়, সম্ভব হলে তো সব বড় পরীক্ষার পরেই দেশবাসীকে ওই রকম সুখ দিতাম। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সব সময় সাধ্য থাকে না।”
ফের নির্জীব হয়ে পড়ল ভারত অধিনায়কের গলা। শুনে মনে হল, কাপ জয়ের প্রথম জন্মদিনে আসলে অধিনায়কের মনে ০-১১-র শ্রাদ্ধবাসর আয়োজিত হচ্ছে। তিনটে ওয়ান ডে সিরিজে হার ধরলে তো ০-১১-ই দাঁড়ায়। নইলে যে শহর গত বছর একই সময় তাঁকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়েছিল, সেই শহর থেকে তো সোমবার ভোরের ফ্লাইটে এক রকম চুপিসারে চলে যাচ্ছেন। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সামান্যতম আগ্রহও নেই। বরং মনে হচ্ছে, শোকের এই পরিবেশে দিনটা তাঁর কাছে উৎপাতের মতোই হাজির হল। কে জানত, ওয়াংখেড়ের বিশাল ওই ছক্কা আর আতসবাজির মহাসমারোহের পরেও শেষ একটা পর্ব থেকে যাবে। সে দিনের সবচেয়ে আলোচিত মানুষটাকেই এক বছর পরের সকালে দেখাবে নির্জীব আর চিরদুখী ট্র্যাজিক নায়ক!

সচিন বলেছিল তুই কাজে আসবি
(ন’মিনিট চার সেকেন্ডের দীর্ঘ ভিডিও নিজের বার্তার সঙ্গে
টুইটারে পোস্ট করেছেন আরোগ্যের পথে দাঁড়ানো যুবরাজ সিংহ)

...আমরা মনে করতে পারি তেরঙ্গা গর্বের সঙ্গে ওড়ার ছবি। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম আনন্দে ভাসছে আর ভারতীয়দের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তব ছুঁয়েছে। আমাদের কাছে এটা একটা মহান ঐতিহাসিক মুহূর্ত কারণ বিশ্বকাপ জেতা ছিল আমাদের কাছে সব কিছু। বিশেষ করে, সচিন তেন্ডুলকরের কাছে কাপ জেতাই ছিল সব। এটাই ছিল আমাদের কাছে প্রত্যাশা। আর আমি ছিলাম ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট, এর বেশি কিছু চাইতে পারতাম না।
এর বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। বিশ্বকাপে যা খেলেছিলাম নিজেও তা আশা করিনি। দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে আমি বিশ্বকাপে নামিনি। যে ভাবে বল টাইমিং করতে চাইছিলাম, সেটা হচ্ছিল না।
কঠিন সময়ে আমার ব্যাটিং, ফর্ম ও ফিটনেস নিয়ে আমি সচিনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ও বরাবর আমাকে বলেছিল, যখন টিমের সবচেয়ে বেশি দরকার হবে তখন তুই কাজে আসবি। এটা আমার কাছে ছিল খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটা ভাবনা। যা এখনও আমার সঙ্গে রয়েছে।
জাহির খান, আমরা জাক বলি, বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে বাংলাদেশে আমাকে বলেছিল তুই এ বারের বিশ্বকাপে স্পেশ্যাল কিছু একটা করবি। সেই সময় আমি কব্জির একটা খারাপ চোটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হ্যাঁ, অবশ্যই ‘স্পেশ্যাল টাইমস উইথ স্পেশ্যাল টিমমেটস’।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.