বিধানসভা ভোটের পর থেকেই গোঘাটে জোনাল কমিটির অফিস নিয়মিত খুলতে পারছিল না সিপিএম। কয়েক বার খোলার চেষ্টা করা হলে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হুমকিও দেওয়া হয়। শেষমেশ ‘শান্তি-শৃঙ্খলা’র কথা মাথা রেখে পুলিশ কর্তারাও ওই অফিস না খোলার ‘অনুরোধ’ করেছিলেন সিপিএম নেতৃত্বকে। মাঝে মধ্যে জনা ১০-২০ কর্মী আসতেন অফিসে। আবার তালা বন্ধ করে দেওয়া হত। এলাকায় সিপিএমের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই ভোটের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে এই পরিস্থিতির মুখে পড়েছে গোঘাট-সিপিএম।
রবিবার বিকেলে কামারপুকুরে সেই গোঘাট জোনাল কমিটির অফিসেই কর্মিসভা ডাকা হয়েছিল। প্রায় সাড়ে চারশো কর্মী হাজির হয়েছিলেন বলে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। তাঁদের মতে, সিপিএম এই এলাকায় ফের ‘শক্তি সঞ্চয়’ করছে বলে আশঙ্কা করছে তৃণমূল শিবির। সে কারণেই ‘পরিকল্পিত’ ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। লোক জড়ো করা হচ্ছিল আগে থেকেই।
কী হয়েছিল এ দিন?
|
সিপিএম নেতারা জানিয়েছেন, বিকেল ৪টে পরে বৈঠক শেষে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন দলের কর্মীরা। নেতারা অফিস থেকে বেরোতেই হামলা হয়। অভিযোগ, রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য অসিত মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর বাঁ পা ভেঙেছে বলে দাবি দলের নেতাদের। লাঠি-রডের ঘায়ে আরও জখম হন গোঘাট ১ লোকাল কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি ঘোষ, দলের সদস্য রামপ্রসাদ মণ্ডল এবং উত্তম রায়। সব মিলিয়ে ১২ জন কম-বেশি চোট পেয়েছেন। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৪ জনকে। পুলিশ খবর পেয়ে এলাকায় আসে। সিপিএম নেতৃত্বের তরফে থানায় অভিযোগ হলেও তাতে নির্দিষ্ট কারও নামোল্লেখ নেই। রাতের দিকে ১ জনকে ধরেছে পুলিশ।
অসিতবাবু বলেন, “দলের কিছু লোককে মারধর করছে দেখে এগিয়ে যাই। ওদের মারধরের কারণ জানতে চাই। হামলাকারীরা কোনও কথা না বলে আমাকে বাঁশ-রড দিয়ে পেটাতে শুরু করল।”
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য হামলার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তা হলে সিপিএম নেতাদের মারল কে? তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, সিপিএমের ‘অত্যাচারে’ এক সময়ে অতিষ্ঠ ছিলেন এখানকার মানুষ। দিনের পর দিন ‘সন্ত্রাস’ চালিয়েছে তারা। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে সিপিএমের দাপট কমে। তাতে স্বস্তিতে ছিলেন সাধারণ গ্রামবাসীরা। কিন্তু সিপিএম নেতারা জোনাল অফিসে ফের লোকজন জড়ো করছে দেখে গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ দিন বিকেলে গুজব রটে যায়, এলাকায় বড় মিছিল বের করবে সিপিএম। গ্রামের কিছু মানুষ তারই প্রতিবাদ করেছেন।
আরামবাগের সাংসদ সিপিএমের শক্তিমোহন মালিকের কথায়, “রাজ্যে একদলীয় শাসন লাগু করতে চায় তৃণমূল। আমাদের মিটিং-মিছিল না করার ফতোয়া দিচ্ছে। কিন্তু ওদের দিক থেকে জন সমর্থন কমছে। আমরা ফের সংগঠিত হচ্ছি। এ কথা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে তৃণমূল। সে জন্য ওরা ভয় পাচ্ছে। সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে। কিন্তু ওরা ভুলে গিয়েছে, গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষই শেষ কথা বলে।” |