প্রক্রিয়া বস্তুটি নিছক কথার কথা নহে। তাহার একটি গুরুত্ব আছে। সবিশেষ গুরুত্ব। এই জন্যই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ যে, ইহার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা সম্ভব। কোনও উদ্দেশ্য মহৎ হইতে পারে। কোনও কাজের অভিলক্ষ্য সুমহান হইতে পারে। বাস্তবে সেই কাজটি কী রূপে চলিতেছে, কী ফললাভ করিতেছে, তাহা লক্ষ করা উচিত। সেই ভাবেই ইহা স্পষ্ট হইতে পারে যে, কাজটি কী ভাবে করা উচিত, কোনও পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন কি না, ইত্যাদি। একটি মূক-বধির কিশোরীকে ধর্ষণ করা হইয়াছিল। সেই অভিযোগে ধৃতগণের ভিতর অপরাধী শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে ‘টি আই প্যারেড’ করা হয়। অভিযোগ ইহাই যে, প্রতিবন্ধী এবং এই মুহূর্তে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তরুণীটিকে যথাযথ রূপে বুঝানো হয় নাই যে, এই বিশেষ কর্মকাণ্ডটির উদ্দেশ্য কী, তখন কী করিতে হয় এবং তাহাকে কী করিতে হইবে। ফলে, এই ধরনের প্যারেড-এর যে উদ্দেশ্য থাকে, তাহা সাধিত হয় নাই বলিয়াও অভিযোগ উঠিয়াছে। অন্য একটি ঘটনায় দেখা গিয়াছে, একটি বিশেষ মৃত্যুর অভিযোগের সত্যাসত্য বিচারের জন্য যে তদন্ত কমিটি গঠিত হইবার কথা, ঘটনার দেড় বৎসর কাটিবার পরেও সেই কমিটি গঠিত হয় নাই। তাহা যে হয় নাই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই সংবাদটি কেহ জানাইবার প্রয়োজনও বোধ করেন নাই। সেই লোকেরা নিজস্ব উদ্যোগে যোগাযোগ করিবার পরে সত্যটি জানিতে পারিয়াছেন।
সত্যই কত দূর কর্তব্যে গাফিলতি, তাহা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু, অভিযোগগুলি হইতে বুঝা যায়, গোড়ায় একটি গলদ থাকিতেছে। কর্মপ্রক্রিয়ার ভিতরেই বিস্তর সংকট। কাজটি হইলেই হইবে না, তাহা যে ঠিক ভাবে হইতেছে, সেই কথাটিও জনসমক্ষে প্রতিপন্ন হওয়া জরুরি। ইহাই প্রক্রিয়ার মাহাত্ম্য। ধর্ষণের পরে ধৃতদের লইয়া একটি টি আই প্যারেড করিতে হয়, তাহা করানো হইল। কোনও মৃত্যুর অভিযোগ লইয়া চাঞ্চল্য ছড়াইলে একটি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করিতে হয়, তাহা করা হইল। বিষয়গুলি নিছকই এমন নহে। কর্তব্য যেমন আছে, তেমনই কর্তব্যের নির্দিষ্ট কিছু রীতিপদ্ধতিও আছে। সেইগুলি মান্য না করিলে মুশকিল। একটি মৃত্যুর ঘটনার দেড় বৎসর পরে খাতায়-কলমে তদন্ত কমিটি গঠিত হইতে পারে, তাহা কত দূর সুফলদায়ী হইবে, সেই সন্দেহ থাকিয়াই যায়। একটি মূক-বধির ধর্ষিতা তরুণীকে যদি ঠিক ভাবে বুঝানো না হয়, শনাক্তকরণ প্যারেড-এর কাজটি কী, তাহা হইলে প্যারেডটি নামমাত্র হইবার শঙ্কাই প্রবল। সরকারি নথি বলিবে, কাজগুলি হইয়াছে। যাহা হইবার কথা, তাহাই হইয়াছে। যে রূপে হইবার কথা, সেই রূপে হইল কি? সমস্যা হইল, যে কোনও ভাবে কাজ চালাইবার একটি মানসিকতা দীর্ঘ বেশ কিছু দশকের অনভ্যাসে জনমনে, এবং প্রশাসনে রীতিমতো ঢুকিয়া গিয়াছে। সেই স্থবিরতা হইতে মুক্তিলাভ জরুরি। কাজকে তাহার যথাযথ সম্মান দিয়াই করিতে হইবে। কাজ যাহা দাবি করে, তাহা প্রদান করিতে হইবে। অন্যথায় কাজের কাজ নহে, (অ)কাজের পথই সুগম হইবে। নথি কী বলিবে, তাহা অবশ্য অন্য প্রশ্ন। |