উত্তরপত্র দেখারও কেন্দ্র থাকা জরুরি’ শীর্ষক পত্রে (১৯-৩) দীপ্তেশ মণ্ডল যে-অভিজ্ঞতার উল্লেখ করেছেন, সেই সূত্রেই এই পত্র। তিন দশক আগে এক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষককে ভয়াবহ বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কলকাতার প্রধান পরীক্ষকের কাছে উত্তরপত্রসমেত যেতে হয়েছিল। তখন রেল ধর্মঘট। বাস অমিল। এমনকী লরি ট্রাকও। অবিশ্বাস্য মাসুল গুনে গরু-ছাগলের মতো এক কয়লা বোঝাই ট্রাকের মাথায় গাদাগাদি ভিড় সামাল দিয়ে কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে কলকাতায় ছুটতে হয়েছিল। প্রধান পরীক্ষক আমার অবস্থা দেখে হতবাক। ওঁর স্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘স্নান করে আগে ভাত খান। আপনার প্রকৃত চেহারাটি আগে দেখি, তার পর অন্য কাজ।’ পর্ষদ বা সংসদ ‘কী যাতনা বিষে’ বুঝবেন কী করে?
এ বার মূল্যায়ন প্রসঙ্গ। জোড়া ঘটনা। মার্কশিটের গোছার সঙ্গে একটা ফাঁকা মার্কশিট পাই। সেটি পর্ষদের কর্তার হাতে তুলে দিই। অতঃপর, আমি এক মান্যব্যক্তির মর্যাদা পাই। যে-কোনও আধিকারিকের কক্ষ তখন আমার কাছে অবাধ উন্মুক্ত। পর্ষদের এমন (অ)কর্মতৎপরতার কৈফিয়ত কে দাবি করবে?
একদিন বসে আছি মহাসচিবের টেবিলে। এগারো ক্লাসের এক উচ্চমাধ্যমিক অন্ধ পরীক্ষার্থী ঢোকে সবান্ধব। ‘সংগীত’ ছিল তার অন্যতম বিষয়। সংশ্লিষ্ট জনৈক কর্মচারী মারফত সে জানতে পেরেছে, প্র্যাকটিকাল পরীক্ষায় তাকে মাত্র ৬৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, অন্যূন ৯০ তার প্রাপ্য। মহাসচিবের জিজ্ঞাসা, ‘তুমি কি ভাল গান গাইতে পারো’? অবশেষে ওখানে দাঁড়িয়ে ওই অবস্থাতেই তাকে গান গেয়ে শোনাতে হয়। মহাসচিব মোটামুটি খুশি। বলে, ‘ঠিক আছে, যাও, বিষয়টি দেখে আমি ১০ নম্বর বাড়িয়ে দেব’। পরীক্ষার্থী নাছোড়। তাকে ৯০ দিতে হবে। অনেক দর-কষাকষির পর বরাদ্দ হয় ৮০।
অন্য একটা ঘটনা। জনৈক অ-বাঙালি প্রধান পরীক্ষক পরীক্ষকমণ্ডলীর সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকে ফতোয়া দেন, ‘উত্তরপত্র যত উন্নত মানের বলেই বিবেচনা করুন, সর্বোচ্চ নম্বর দেবেন ৪০। সকলে চুপ। আমি প্রতিবাদ করি। জানতে চাই, এর অর্থ কী। ভদ্রলোক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাঙালি ভাল ইংরেজি জানে না’। এমন মন্তব্যেও বাঙালি নীরব। আমি বলি, মান অনুসারেই নম্বর দেব, অনৈতিক মূল্যায়নে আমি অপারগ।
প্রথম কিস্তির উত্তরপত্র জমা দেওয়ার পর যখন দ্বিতীয় কিস্তির মূল্যায়ন করি, তখন প্রধান পরীক্ষক নির্দেশ দেন, ‘আমার সঙ্গে আলোচনার আগে মূল্যায়ন বন্ধ রাখুন’। আমার অপরাধ (!), দ্বিতীয় পত্রে এক পরীক্ষার্থীকে ৬৫ নম্বর দিয়েছি। আমার বিবেচনায় যদিও তার আরও প্রাপ্য ছিল। সাক্ষাৎ হতেই ভদ্রলোক উত্তরপত্রখানি ছুড়ে ফেলে হুঙ্কার দেন, ‘আপনি বেশি নম্বর দিয়েছেন’! জানতে চাইআপনি কি উত্তরপত্র পড়েছেন? ‘না।’ সেই একই অশালীন ঔদ্ধত্য। ওঁর গৃহিণী কফি হাতে এসে বলেন, ‘এত চিৎকার করছ কেন’? মেমসাহেবকে কারণ ব্যাখ্যা করে অনুরোধ জানাই, ওঁকে উত্তরপত্রখানা পড়তে বলুন না। কাজ হয়। ভদ্রলোক কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে বোধহয় গৃহিণীকে তুষ্ট করার জন্যই চোখ বোলাতে থাকেন। অবিশ্বাস্য কাণ্ড। কফি ঠান্ডা হয়। পাঠান্তে মন্তব্য করেন, ‘আপনি কম নম্বর দিয়েছেন’। জিজ্ঞাসা করি, কত পাওয়া উচিত? ‘পঁচাশি, পঁচানব্বই যা খুশি।’ আমি বলি, এ বার তা হলে বলুন, বাঙালি ইংরেজি লিখতে জানে। উনি অকপটে তাই করেন। করমর্দন করেন। একই সঙ্গে সিগারেট এবং ধন্যবাদ দেন। আমি বলি, আপনি বিবেচনা মতো নম্বর বাড়িয়ে দিন। উনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আপনার নম্বরই পর্ষদে পাঠিয়ে দিয়েছি। দুঃখিত।’ |
কিশোরীমোহন শাস্ত্রী। সূত্রগড়, শান্তিপুর, নদিয়া
|
কলকাতা পুরসভা বিশাল ছাড়ের টোপ-সহযোগে বিল পাঠিয়ে দাবি করছে, ১৯৭০ এমনকী ১৯৬০ সালের ট্যাক্স বকেয়া পড়ে আছে। অতি পুরনো দিনের নথি রাখাও খুব মুশকিল। লিমিটেশনস অ্যাক্ট বা তামাদি আইন কি কর্পোরেশনের পুরোনো দাবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়? |
সুজিত ভট্টাচার্য। কলকাতা-৩৩
|
লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন কচিকাঁচাদের অভিভাবক পরিবৃত হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখি। দেখি, অধিকাংশই টিফিন সারে স্টেশনে বসে, নয়তো ট্রেনে যেতে যেতে। পক্ষী-মাতার মতো আগলে থাকা মায়েরা হয় পড়া ঝালাই দিতে থাকেন নানা প্রশ্ন করে, নয়তো সে দিন বিকেল ওই সন্ধ্যার সাঁতার, পড়া, অমুক স্যার, তমুক স্যারের রুটিন বলে যেতে থাকেন গড়গড়িয়ে।
কেন যে বেচারা বাচ্চাগুলো প্রতিবাদ করে বলে না, শান্তি মতো একটু খেতে দাও তো, পরে সব কথা বলব, সেটাই আশ্চর্য লাগে! আরও দেখি, দৈত্যাকার সব স্কুলের ব্যাগ যেন বাধ্যতামূলক ভাবে সব সময়ই মায়েদের কাঁধে।
‘স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী, আমরা কী বইতে পারি...অমুক হও, তমুক হও কেউ বলে না মানুষ হও’ (কবীর সুমন)। কথাগুলি সম্ভবত ওঁরা বুঝেও বোঝেন না। |
শঙ্খমণি গোস্বামী। নোনাচন্দনপুকুর, কলকাতা-১২২
|
জুনিয়র, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বদলির বিষয়টি সরকার নীতিগত ভাবে গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এতে খুব বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা উপকৃত হবে বলে আমার মনে হয় না। পরিবর্তে বিষয়ভিত্তিক সরাসরি খালি পদগুলিতে বদলি নীতি গ্রহণ করলে ভাল হয়। কারণ, কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়োগ করার সময় সংরক্ষণ নীতি পালিত হচ্ছেই। আবারও প্রতিটি স্কুলে সংরক্ষণের কোনও প্রয়োজন আছে কি? সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতিটি অফিসে যেমন পালন করা হয় না। অতএব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদগুলিতে বদলি করে নতুন খালি পদে নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করলে বদলি নীতি অনেক সহজ হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাঁদের ঈপ্সিত স্কুলে কিংবা তার কাছাকাছি জেলায় যেতে পারবেন। |
অমল সিংহ রায়। মোরাপোড়া চৌপথি, কোচবিহার |