নাছোড় পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দৌলতে এই সে দিন পর্যন্ত বাতাসে শীতের একটা আমেজ ছিল। এ বার ঝঞ্ঝার রেশ মিটতেই দেশ জুড়ে, বিশেষত পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। যার মধ্যে পূর্ব ভারতের জন্য মেঘ-বৃষ্টির একটা ইঙ্গিতও দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদেরা।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রকোপ কাটতে না-কাটতেই তামাম পশ্চিম ভারত জুড়ে চোখ রাঙাচ্ছে গ্রীষ্ম। রাজস্থানের কিছু কিছু অংশ ইতিমধ্যেই তাপপ্রবাহের কবলে। গুজরাতের কিছু কিছু এলাকায় আজ, সোমবার থেকে তাপপ্রবাহের
পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে দিল্লির মৌসম ভবন। এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকেই দেশের ওই সমস্ত তল্লাটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৌসম ভবনের এক আবহবিজ্ঞানীর মতে, এ মরসুমে সারা দেশেই শীত অনেকটা প্রলম্বিত হওয়ায় তাপমাত্রার বৃদ্ধিটা বেশ কিছু দিন ধরে আটকে ছিল। এখন অনুকূল পরিস্থিতি পাওয়ার ফলে তা দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে।
এবং পশ্চিমের এ হেন জ্বালা ধরানো পরিস্থিতির মধ্যেই পূর্বের জন্য শীতলতার বার্তা লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন করছে আবহবিদ মহল। কেন?
ওঁদের দাবি, রাজস্থান এবং গুজরাতের তাপপ্রবাহের পরোক্ষ প্রভাবের ফলেই পূর্ব ভারত-সহ পশ্চিমবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এক আবহবিদ ব্যাখ্যা দিলেন, “পশ্চিমে তাপমাত্রা যত বৃদ্ধি পাবে, সেখানকার গরম বাতাস তত পরিমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠে গিয়ে নীচের স্তরে শূন্যতার সৃ্ষ্টি করবে। যা পূরণ করবে সমুদ্র থেকে আসা জলীয় বাষ্প। সেই জলীয় বাষ্প-সহ মেঘ সরে যেতে থাকবে মধ্য ভারতের দিকে। তার জেরেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব ভারতে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হবে।” |
বস্তুত পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই বৃষ্টিটা এখন খুবই প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। কেননা গোটা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি তো বটেই, মার্চেরও ৩০ তারিখ পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এক ফোঁটা বৃষ্টি পায়নি। শনিবার, মার্চের শেষ দিনে কালবৈশাখীর জেরে ঝাড়খণ্ড ও ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গে ভাল বৃষ্টি হলেও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় তেমন কিছু হয়নি। কলকাতায় তো হয়েছে মাত্র ০.১ মিলিমিটার! অথচ মার্চ মাসে কলকাতা ও আশপাশে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু পরিমাণটা ক্রমেই কমছে। যেমন, ২০১০-এর মার্চে হয়েছিল ১৬.৭ মিলিমিটার। ২০১১-র মার্চে ১.১ মিলিমিটার। আর ২০১২-য় এটা সাকুল্যে ০.১ মিলিমিটারে নেমে যাওয়ায় আবহবিদদের কপালে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ।
এই অবস্থায় বৃষ্টির জন্য এখন পশ্চিম ও মধ্য ভারতের আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর নেই বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ঝাড়খণ্ডের উপরে উচ্চচাপ বলয় তেমন ভাবে তৈরি না-হওয়ায় এ বার কালবৈশাখীতে ভাটা পড়েছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে জলীয় বাষ্প যেটুকু ঢুকছে, তা এখানে বৃষ্টি না-নামিয়ে উত্তর-পূর্ব বা বাংলাদেশে গিয়ে ঝরে পড়ছে। তার প্রভাবে উত্তরবঙ্গও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি পাচ্ছে। এমনকী, মঙ্গলবারের মধ্যে উত্তরবঙ্গে ফের এক বার বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখছে আবহাওয়া অফিস।
কিন্তু কলকাতা সন্নিহিত দক্ষিণবঙ্গ এখনও কালবৈশাখীর দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত। বরং আবহবিদদের পূর্বাভাস: আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। তার পরে, পশ্চিমী তাপপ্রবাহের পরোক্ষ প্রভাবে ঝড়-জলের মুখ দেখলেও দেখতে পারে কলকাতা। |